আব্দুল হাই সভাপতি মিন্টু সাধারণ সম্পাদক
ঝিনাইদহ অফিস: ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সর্বসম্মতিক্রমে আব্দুল হাই এমপি সভাপতি পদে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। গতকাল বুধবার শহরের ওয়াজির আলী হাইস্কুল মাঠে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন শেষে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ এ ঘোষণা দেন। এছাড়া সহসভাপতি হিসেবে দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান ও সাবেক এমপি সফিকুল ইসলাম অপু মনোনীত হয়েছেন। এদিকে আব্দুল হাই সভাপতি ও সাইদুল করিম মিন্টু জেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় শহরে আনন্দ মিছিল বের করা হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ মন্তব্য করেন-বিএনপি ভাঙতে শুরু করেছে, অল্প দিনেই টুকরো টুকরো হবে। বেগম খালেদা জিয়া জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধের নায়ক বলেছেন। কিন্তু তিনি ছিলেন খলনায়ক, পাকিস্তানের এজেন্ট। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত। তিনি অবধৈভাবে ক্ষমতা দখল করে রাজাকারদের পুনর্বাসিত করেছেন। রাজাকার শাহ আজিজ ও আব্দুল আলিমকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। তিনি গোলাম আজমকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়াকে জঙ্গিনেত্রী আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের এ নেতা আরও বলেন, দেশকে অচল করে দিতে তিনি উঠেপড়ে লেগেছেন। দলীয় কার্যালয়ে নিজে অবরুদ্ধ হয়ে দেশের মানুষের ওপর পেট্রোলবোমা সন্ত্রাস চালাচ্ছেন। তিনি দেশের গণতন্ত্র হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন। গণতন্ত্রের কথা বলে আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারছেন। সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদের এ নেত্রী দেশকে জঙ্গিরাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা করছেন। মানুষ হত্যা করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা কোনো আন্দোলনের মধ্যে পড়ে না।
হানিফ আরও বলেন, বিএনপির পতনের ধ্বনি খালেদা জিয়ার কানে পৌঁছাচ্ছে না। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় তিনি ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে যাননি। নিজেই অপরাধ করে এখন আওয়ামী লীগের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে যা কিছু অর্জন হয়েছে, সবই করেছে আওয়ামী লীগ। তাই দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। জিয়াউর রহমান যেভাবে অবৈধভাবে ক্ষমতায় গিয়েছিলেন, ঠিক একই পন্থায় বেগম খালেদা জিয়া অবলম্বন করতে চাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন হানিফ।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বক্তব্য দেন- কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক এমপি। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় কার্যকরী সদস্য অ্যাডভোকেট সুভাষ চন্দ্র বোস, বেগম মুন্নুজান সুফিয়ান এমপি, মোস্তফা ফারুক মোহাম্মদ, এসএম কামাল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সাইফুজ্জামান শেখর, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপু ও যুগ্ম সম্পাদক ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। সম্মেলন পরিচালনা করবেন জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান।
এদিকে এ সম্মেলনে দু পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর ও ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছে ৫ জন।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সকাল ১০টার দিকে সম্মেলন স্থলে জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নেতাকর্মীরা জড়ো হতে থাকেন। বেলা পৌনে ১২টার দিকে মঞ্চের সামনের জায়গা দখল ও চেয়ারে বসাকে কেন্দ্র করে দু পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে পরস্পরকে ধাওয়া করে। এ সময় মঞ্চের সামনে থাকা শতাধিক চেয়ার ভাঙচুর এবং বেশ কিছু বিলবোর্ড ও ব্যানারও ছিঁড়ে ফেলেন উত্তেজিত নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হালকা লাঠিপেটা করে পুলিশ। এতে পাঁচজন আহত হন। এ ঘটনায় সম্মেলন স্থল ও এর বাইরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। কিছু সময় পরে সহকারী পুলিশ সুপার গোপীনাথ কাঞ্জিলালের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই বলেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। মাঠে বসা নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিলো। ঝিনাইদহ সহকারী পুলিশ সুপার গোপীনাথ কাঞ্জিলাল জানান, মাঠ দখল নিয়ে দু দলের যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিলো, পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণে নেয়। এতে কাউকে আটক করা হয়নি। সংঘর্ষের পর বেলা সাড়ে ১২টার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য আব্দুল হাইয়ের সভাপতিত্বে সম্মেলন শুরু হয়।