সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণির প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী গণকোচিঙের শিকার

এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার পর অবৈধভাবে গণকোচিং বন্ধের আহ্বান জানানো হলেও কর্ণপাত করেননি কর্তারা

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির সকল শাখার সকল শিক্ষার্থীকে কোচিং বাধ্যতামূলক করে হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে কাড়ি কাড়ি টাকা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধ নীতিমালার অজুহাতে বিদ্যালয়টির তিনিট শ্রেণির প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থীকে কোচিঙে বাধ্য করা হয়েছে। অথচ ওই নীতিমালায় স্পষ্ট করে লেখা আছে, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর অভিভাবকের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়ভিত্তিক কোচিং করানো যাবে। তাহলে গণহারে সকল শিক্ষার্থীকে কোচিঙে বাধ্য করা হলো কেন?

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র আল আমিনের আত্মহত্যার পরও বিদ্যালয়ের গণকোচিং বন্ধ হয়নি। উপরন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেছেন, আমরা তো নীতিমালা অনুযায়ী বিষয়ভিত্তিক দেড়শ টাকা করে নিচ্ছি না। সকল বিষয়ে সকল শিক্ষার্থীদের কোচিং করিয়ে মাথাপিচু ৪শ টাকা করে নিচ্ছি। আর দশম শ্রেণির? দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতি নেয়া হচ্ছে ৫শ টাকা কোচিং ফি। নীতিমালায় কী এভাবে বিদ্যালয়ে গণকোচিঙের কথা বলা আছে? জবাব মেলেনি। বরঞ্চ তিনি রিপোর্ট না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, কোচিঙের ব্যবস্থা ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তেই নেয়া হয়েছে।

সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ক শাখায় ৮০ জন, খ শাখায় ৯০ জন, গ শাখায় ৮০ জন, ঘ শাখায় ৯০ জন ও ঙ শাখায় ৯০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। ৮ম শ্রেণির ক শাখায় ৭৭ জন, খ শাখায় ৮০ জন, গ শাখায় ৭০ জন, ঘ শাখায় ৩৫ জন ও ঙ শাখায় ৭০ জন শিক্ষার্থী। দশম শ্রেণিতে ক শাখায় ১শ ও খ শাখায় ১৩২ জন শিক্ষার্থী। সপ্তম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক কোচিং করানো হচ্ছে। এ হিসেবে কোচিং বাবদ প্রতি মাসে বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিকট থেকে আদায় করছে প্রায় সোয়া ৪ লাখ টাকা। এছাড়া শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের নির্ধারিত ফি তো দিতে হচ্ছেই। ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের ওপর পড়ছে বাড়তি চাপ। দরিদ্র অভিভাবকদের উঠছে নাভিশ্বাস। যদিও বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেছেন, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে নির্ধারিত কোচিং ফির কিছু কম নেয়া হয়।

শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বাড়তি আর্থিক চাপ থেকে রেহাই দিতে বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোচিং বন্ধ করে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে আন্তরিক করার লক্ষ্যে শিক্ষামন্ত্রণালয় একটি নীতিমালা তৈরি করে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগ্রহী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত সময়ের পূর্বে বা পরে শুধু অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান প্রধান অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা গ্রহণ করাতে পারবেন। একটি বিষয়ে মাসে কমপক্ষে ১২টি ক্লাস করাতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিটি ক্লাসে সর্বোচ্চ ৪০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারবে। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে তাহলে কী হচ্ছে?

সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু ৭ম শ্রেণিরই ৪৩০ জনকে কোচিঙে বাধ্য করা হয়েছে। তবে কি বিদ্যালয়টির ৭ম, ৮ম ও দশম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীই সকল বিষয়ে পিছিয়ে পড়া? তাহলে বিদ্যালয়ের নিয়মিত ক্লাসে শিক্ষকরা কী শিক্ষা দেন? বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেকেই বলেছেন, সকাল সাড়ে ৭টা থেকে পৌনে ১০টা পর্যন্ত যে ক্লাস হয় সেটাকেই কোচিং বলা হয়। পরে নিয়মিত ক্লাস শুরু হলেও তা চলে দায়সারাগোছের। তাছাড়া দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীদের অনেকেই কোচিং শেষে খাওয়ার জন্য বাড়ি গিয়ে নির্ধারিত মূল ক্লাসে আর ফেরে না। সেদিকে শিক্ষকদের তেমন নজরও নেই।

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে কোচিং নিয়ে যাচ্ছেতাই দীর্ঘদিন ধরে চললেও প্রশাসনিকভাবে বন্ধের তেমন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বিদ্যালয়টির ৮ম শ্রেণির এক ছাত্র নবীননগরের আল আমিন আত্মহত্যা করলে অবৈধভাবে বাধ্যতামূলক কোচিং বন্ধের আহ্বান জানায় এলাকার সচেতন শিক্ষানুরাগী মহল। এরপরও তেমন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায়নি। এরই মাঝে চুয়াডাঙ্গার একটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম ও ১০ম শ্রেণিতে কোচিং বাধ্যতামূলক করানোর পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অবশ্য এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ভি.জে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর-ই আলম মোর্শেদার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, কোচিং বাধ্যতামূলক করানোর সুযোগ নেই। নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনি না করিয়ে বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে আন্তরিক হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। সেই সাথে বলা হয়েছে, শুধু আগ্রহ শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো যেতে পারে।