মাগুরায় দগ্ধ তিনজনের মৃত্যু : ৬ জন হাসপাতালে

২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধের পাশাপাশি চলছে ৭২ ঘণ্টার হরতাল

 

স্টাফ রিপোর্টার: ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের ৭৬তম দিন ছিলো গতকাল রোববার। অবরোধের পাশাপাশি জোটের ডাকে চলছে হরতাল। এদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে দগ্ধ আরও ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে শনিবার রাতে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আরও একজন মারা যান। বাজিতপুরে বস্তাভর্তি পেট্রোলবোমা উদ্ধার করা হয়েছে। মানিকগঞ্জে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে দুর্বৃত্তদের ছোড়া আগুনে পুড়ে গেছে শতাধিক মূল্যবান বই। টাঙ্গাইলে বিএনপির মিছিলে পুলিশের লাঠিচার্জে ২৫ জন আহত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মিনিবাস পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। দেশব্যাপী পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে অর্ধশতাধিক। রাজধানীতে তিনটি গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সকাল ৭টার দিকে শিক্ষাভবনের পশ্চিম পাশে ৩ নং রুটের একটি মিনিবাসে ও সাড়ে ৭টার দিকে সার্কিট হাউস রোডে টিপটপ মসজিদের কাছে আজমেরী গ্লোরী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ফার্মগেট এলাকায় বিআরটিসির একটি দ্বিতল বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ রাজধানী বিভিন্ন থানা এলাকা থেকে বিএনপি-জামায়াতের ৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

মাগুরায় দগ্ধদের মধ্যে রোববার ভোরে বালিশ্রমিক রৌশন মিয়া ও দুপুরের দিকে শাকিলের মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে শনিবার রাতে মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ ও রোববার বিকাল পৌনে ৫টায় ট্রাক মালিক শরীফ মিয়া চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ ও শরীফ ১৯ মার্চ চাঁদপুর চন্দ্রা এলাকায় ট্রাকে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হন। এ নিয়ে বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯ জন মারা গেলেন।

এদিকে অনেকে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে জানিয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি ৩৪ জনের মধ্যে কেউই আশঙ্কামুক্ত নয়। শনিবার রাতে মাগুরা মুগিরঢাল এলাকায় বালুর ট্রাকে পেট্রলবোমায় দগ্ধ ৯ জনকে রোববার ভোররাতে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। দগ্ধ সবাই দিনমজুর। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাতেন তারা। মাগুরা সদর থানার মালিক গ্রামের বাসিন্দা সবাই। দগ্ধ ৯ জনই একে অপরের আত্মীয়। দল বেঁধে বালু উত্তোলনের কাজ করতেন তারা। শনিবার রাতে বালু উত্তোলন শেষে বাসায় ফিরছিলেন তারা। রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই ট্রাকটিতে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করা হলে চালকসহ সবাই দগ্ধ হন।

গুরুতর আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান সম্ভব না হওয়ায় রোববার ভোররাতে বালু শ্রমিক মতিন বিশ্বাস, শাকিল আহমেদ, ইলিয়াছ আলী, নাজমুল, ফারুক, আরব আলী, ইয়াদুল, রৌশন ও ট্রাকচালক ইমরানকে ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আনা হয়। ওই সময় বার্ন ইউনিট জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক বালু শ্রমিক রৌশনকে মৃত্যু ঘোষণা করেন। বাকি ৮ জনকে ভর্তি করানো হয়। যাদের মধ্যে রোববার বেলা ১১টা ৭ মিনিটে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন বালু শ্রমিক শাকিল আহমেদ। এদিকে রোববার বিকাল পৌনে ৫টায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ট্রাক মালিক শরীফ মিয়া। শরীফ ১৯ মার্চ চাঁদপুর এলাকায় ট্রাকে পেট্রলবোমায় দগ্ধ হয়ে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।

দিনমজুর মতিনের শরীর পুড়ে গেছে ৭১ শতাংশ। সঙ্গে শ্বাসনালীও। মতিন ও আরব আলী চাচাতো ভাই। মতিনের স্ত্রী জাহিদা আক্তার জানান, তাদের পুরো গ্রামের মানুষ খুবই দরিদ্র। প্রায় সবাই শ্রমিক। দল বেঁধে দিনমজুরির কাজ করে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক ডা. জুলফিকার আলী লেনিন ও প্রধানমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব-২ সাইফুজ্জামান শিখর জানান, তারা দুজন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বার্ন ইউনিটে এসেছেন। প্রত্যেক দগ্ধ রোগীকে নগদ ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন। স্বজনদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। সাইফুজ্জামান শিখর জানান, মাগুরা থেকে দগ্ধ হয়ে আসা রোগীরা তার এলাকার। বার্ন ইউনিটের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর সামন্ত লাল সেন মাগুরা থেকে আসা ৫ জনের অবস্থা চরম শঙ্কটাপন্ন জানিয়ে বলেন, এমন নৃশংসতা বন্ধ করা জরুরি।

রৌশন আলী ও শাকিল আহম্মেদ নামে দুই শ্রমিক মৃত্যুতে মাগুরার মালিকগ্রামে শোকের মাতম চলছে। অসহায় এই পরিবারে স্বজনদের আহাজারিতে গ্রামের আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। রৌশন দিনমজুরের কাজ করত। শাকিলও একই পেশায় নিয়োজিত ছিল। তাদের হারিয়ে পুরো পরিবার, স্বজনরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।

মাগুরার জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান অসহায় পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পরিদর্শন: গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বার্ন ইউনিট পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি মাগুরায় ট্রাকে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ রোগীদের দেখেন এবং স্বজনদের সাথে কথা বলেন। তিনি স্বজনদের উদ্দেশে বলেন, যারা পেট্রলবোমা মেরে মানুষ হত্যা করছে তাদের বিচার অবশ্যই হবে।

মক্তিযোদ্ধা ইউসুফের দাফন: পেট্রোলবোমা হামলায় নিহত ট্রাকচালক মুক্তিযোদ্ধা মো. ইউসুফ খানকে রোববার বিকালে তার কুমিল্লার গ্রামের বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান। ইউসুফ খান কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার কাকিয়ারচর গ্রামের রুস্তম খানের ছেলে।