আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিতে যাচ্ছে কি? এ প্রশ্ন এখন রাজনৈতিক মহলের প্রায় প্রত্যেকের। ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হয়েছে এবং হচ্ছে- তাদের এক দফা, এক দাবি। আর তা হলো- সরকার পতনের মধ্যদিয়ে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন। এ দাবি আদায়ে তারা লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে চলেছে, হরতালও পালন করছে সপ্তার পাঁচ দিনজুড়ে। স্বভাবতই ধারণা হতে পারে, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না। কিন্তু খবর পাওয়া যাচ্ছে, দলটির নীতিনির্ধারকরা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করছেন। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমেদ বলেছেন, সিটি নির্বাচন নিয়ে চেয়ারপারসনের মনোভাব ইতিবাচক। খবর আরও রয়েছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাই সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, নির্বাচনে বিজয়ী হতে পারলে সেই বিজয়কে আন্দোলনের সাফল্য হিসেবে প্রমাণ করা যাবে।
আমরা মনে করি, বিএনপি যদি আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে, তাহলে সেটা শুধু দলটির জন্যই ইতিবাচক হবে না, হবে সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনীতির জন্যও। তাছাড়া বিএনপি তো নির্বাচনমুখী একটি গণতান্ত্রিক দল। এ দলের রয়েছে সুদীর্ঘ গণতান্ত্রিক ইতিহাস। দ্বিতীয়ত, রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত লক্ষ্য যদি হয় ক্ষমতা দখল, তাহলে সেজন্য তো নির্বাচনে অংশ নিতেই হবে। অবশ্য সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হলেই ক্ষমতা পাওয়া যায় না; তবে এটা তো ঠিক এ নির্বাচনে অংশ নিলে জনসম্পৃক্ততা বাড়বে, যা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বিএনপি এ সরকারের আমলেই বিভিন্ন স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ের সে ধারা অব্যাহত রাখলে দলটিরই লাভ, অন্য কারও নয়। তাই আমরা মনে করি, বিএনপিতে যদি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিরুদ্ধ মতের একটা অংশ থাকেও, চেয়ারপারসন ও নীতিনির্ধারকদের উচিত হবে সেই মতকে প্রশ্রয় না দেয়া। তারা নিশ্চয়ই এতোদিনে বুঝে গেছেন, অবরোধ-হরতাল দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো সম্ভব নয়। বস্তুত জনসম্পৃক্ততা ছাড়া সরকারের পতন ঘটানো যায় না। যেকোনো নির্বাচনই রাজনৈতিক দলের জন্য জনসম্পৃক্ততার সুযোগ তৈরি করে। সুতরাং এ লক্ষ্যেই বিএনপির কর্মসূচি সাজাতে হবে দলটির নেতৃত্বকে। নির্বাচনে অংশ নেয়ার পর যদি সরকারের পক্ষ থেকে কোনো কারচুপি হয়, সেক্ষেত্রেও বিএনপির লাভ বৈ লোকসান হবে না। তখন তারা কারচুপিকে কেন্দ্র করে আন্দোলন করলে জনগণও তাতে সায় দেবে।
সিটি কর্পোরেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকার। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্ব আরও বেশি। বিএনপির জন্য একটি সুযোগ এসেছে তাদের জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করার। অবরোধ-হরতালের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করা যায় না। নির্বাচনই হচ্ছে জনপ্রিয়তা পরীক্ষা করার সর্বোত্তম উপায়। সিটি নির্বাচন যদিও দলীয় ভিত্তিতে হয় না, তবে বিএনপিদলীয় প্রার্থীরা যদি বিজয়ী হতে পারেন, তাহলে তাদের আন্দোলনও বেগবান হবে সন্দেহ নেই। তবে বিএনপি নেতৃত্বকে মনে রাখতে হবে, এ যুগে হরতাল-অবরোধ কোনো ইতিবাচক কর্মসূচি হতে পারে না। আমরা আশা করবো, আসন্ন সিটি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে এবং নির্বাচন কমিশন তথা সরকার এ নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার ক্ষেত্রে তাদের শতভাগ আন্তরিকতা প্রদর্শন করবে।