মেহেরপুর গাংনীর কেশবনগরে শিশুদের ক্রিকেট খেলা নিয়ে বিরোধ : সংঘর্ষ
মাজেদুল হক মানিক: শিশুদের ক্রিকেট খেলা নিয়ে সৃষ্ট সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত হয়েছেন হাসিবুল ইসলাম (২৫) নামের এক দরিদ্র কৃষকের। তিনি দিনমজুরিও করতেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে মেহেরপুর গাংনী উপজেলার কেশবনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কৃষক ওই গ্রামের জমির উদ্দীনের ছেলে। তিনি এক কন্যা সন্তানের জনক। ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে গতরাতে গ্রেফতার করেছে গাংনী থানা পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেলে গ্রামের মাথাভাঙ্গা নদীর পাশে ক্রিকেট খেলা নিয়ে ইনামুলের ছেলে তৌফিক (৭) ও আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে সুরুজের (৯) সাথে গণ্ডগোল হয়। এক পর্যায়ে ইনামুলের স্ত্রী ও মা মিলে সরুজকে মারধর করেন। বিষয়টির প্রতিবাদ জানান সুরজের পিতা আব্দুল কুদ্দুস। শিশুটিকে পিটিয়েও তাদের জ্বালা মেটেনি। অপরাধ স্বীকার না করে আরো হিংস্র হয়ে ওঠেন ইনামুলের পরিবারেরর সদস্যরা। প্রতিবাদকারী কুদ্দুসকেও তারা মারধর করতে কুণ্ঠাবোধ করেননি। কুদ্দুসকে মারধরের জেরে দু পরিবারে সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে ইনামুল পক্ষের লোকজনের ধারালো অস্ত্রের কোপে গুরুতর আহত হন কুদ্দুসের ভাই হাসিবুল ইসলাম। তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন চিকিৎসক। দ্রুত তাকে নেয়া হয় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে হাসিবুলের মৃত্যু হয়।
হাসিবুলের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, কুদ্দুসকে মারধর করার সময় হাসিবুল ঠেকাতে এগিয়ে যান। তিনি কাউকে মারধর করেননি। কিন্তু ইনামুলের চাচাতো ভাই দুখু মিয়া ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাসিবুলের ডান পাশের ঘাড়ের ওপর সজোরে একটি কোপ মারে। এতেই তিনি মারাত্মক জখম হন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে হাসিবুলের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক। সংঘর্ষের ঘটনায় দুখু মিয়াও আহত হয়েছেন। তাকে অজ্ঞাত কোন স্থানে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বলে গ্রাম সূত্রে জানা গেছে।
হাসিবুলের মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছানোর পর চারদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবার ও স্বজন ছাপিয়ে শোকার্ত হয়ে পড়েন গ্রামবাসী। অবুঝ কন্যা শিশুকে নিয়ে নিহতের স্ত্রী ইসমত আরা পড়েছেন অথই সাগরে। আর সন্তান হারিয়ে হাসিবুলের পিতামাতা হতবিহ্বল। কোনো সান্ত্বনায় তাদের বুঝ মানছে না।
এদিকে সংঘর্ষের খবর পেয়ে গাংনী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকরাম হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের কয়েকটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এতে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে সাড়ে তিন হাত লম্বা দুটি রামদা, ১টি ফালা ও কয়েকটি লাঠি উদ্ধার করে পুলিশ। রাতে ওই গ্রাম থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হচ্ছেন- রমজান আলীর ছেলে উজ্জল হোসেন (২৭), আহারুল ইসলামের ছেলে মিলন হোসেন (২৭) ও মৃত ইয়াজ উদ্দীনের স্ত্রী সানোয়ারা খাতুন (৪০)। গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত বলে জানান গাংনী থানার ওসি। হত্যা মামলায় তাদেরকে আজ শুক্রবার মেহেরপুর আদালতে সোপর্দ করা হবে বলেও জানান তিনি।
গতরাত সাড়ে বারোটার দিকে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত হাসিবুলের মরদেহ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালমর্গে ছিলো। আজ শুক্রবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নিজ বাড়িতে আনা হবে। পরিবারের পক্ষ থেকে হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে।
নিহতের পারিবারিক পরিচয়: গাংনীর ষোলটাকা ইউনিয়নের কেশবনগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক জমির উদ্দীনের দু ছেলে ও তিন মেয়ের মধ্যে হাসিবুল সবার ছোট। নিহতের বড় ভাই আব্দুল কুদ্দুস ইটভাটা শ্রমিক। তিন বোন সকলেই বিবাহিতা। বছর দুয়েক আগে চুয়াডাঙ্গার আলমাডাঙ্গা উপজেলার আসাননগর গ্রামের ইসলাম আলীর মেয়ে ইসমত আরার সাথে হাসিবুলের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে আসে ফুটফুটে কন্যাসন্তান ময়না। তার বয়স দেড় বছর। দিনমজুরি করে তিনি সংসার চালাতেন। নিজ সংসারের পাশাপাশি দেখাশোনা করতেন পিতামাতার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তিকে হারিয়ে গোটা পরিবার যেমনি শোকে পাথর তেমনি স্ত্রী কন্যার ভবিষ্যত ভেবে চরম হতাশায় ভেঙে পড়েছেন তারা।