অস্ট্রেলিয়ার সামনে পাকিস্তান

মাথাভাঙ্গা মনিটর: শেষ আটের লড়াই এখনও শেষ হয়নি, অথচ অ্যাডিলেডে আজ ফাইনাল খেলতে নামছে অস্ট্রেলিয়া! হারলেই যেহেতু বিশ্বকাপ শেষ, তাই কোয়ার্টার ফাইনালকেই ফাইনাল হিসেবে দেখছেন মাইকেল ক্লার্ক। অসি অধিনায়কের এমন বাড়তি সতর্কতার কারণ প্রতিপক্ষের নাম পাকিস্তান। চিরকালের অননুমেয় দলটিকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না ক্লার্ক। নিজেই বলেছেন, পাকিস্তানকে হালকাভাবে নিলে বিশ্বকাপ থেকে ছুটি হয়ে যেতে পারে তাদের। কাগজে-কলমে অবশ্য অস্ট্রেলিয়াই পরিষ্কার ফেভারিট। মিসবাহ-উল-হকও সেটা মেনে নিচ্ছেন। তবে ফেভারিট-তত্ত্বে যে তার আস্থা নেই সেটাও জানিয়ে দিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক, অবশ্যই তারা ফেভারিট, কিন্তু ফেভারিটরাই সবসময় জিতবে এমন কোনো বাঁধাধরা নিয়ম নেই। নির্দিষ্ট দিনে যে দল ভালো খেলবে, সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারবে এবং ভাগ্য যাদের সহায় হবে তারাই জিতবে।ভারত ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাজেভাবে হারার পর টানা চার ম্যাচ জিতে যেভাবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে এসেছে পাকিস্তান, তাতে ১৯৯২ বিশ্বকাপের পুনরাবৃত্তি দেখছেন অনেকেই। এই অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই সেবার খাদের কিনার থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিল ইমরান খানের দল। পাকিস্তানের কাছে ৪৮ রানে হেরে গ্র“পপর্ব থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়াকে। গত বিশ্বকাপেও গ্র“পপর্বে পাকিস্তানের কাছে চার উইকেটে হেরেছে তারা। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপে আগের আট ম্যাচে দুদলেরই জয় সমান চারটি করে। ফাইনালে পাকিস্তানকে হারিয়েই ১৯৯৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। পাকিস্তান-বধের টোটকার খোঁজে ১৯৯৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহর শরণাপন্ন হয়েছেন ক্লার্করা। ইতিহাস অবশ্য স্বাগতিকদের পক্ষেই। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ দশ ওয়ানডের নয়টিতেই হেরেছে পাকিস্তান। একমাত্র জয়টি সেই ২০০৫ সালে। গত বছর আরব আমিরাতে দুদলের সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজটিও ৩-০-তে জিতেছে অস্ট্রেলিয়া।

 তারপরও নিজেদের ফেভারিট ভেবে আত্মতুষ্টির ফাঁদে পা দিতে চান না ক্লার্ক, পাকিস্তানকে নিয়ে কোনো পূর্বানুমান খাটে না। দলটিতে প্রতিভার ছড়াছড়ি। তাদের পেস আক্রমণ দুর্দান্ত এবং দলে তারুণ্য ও অভিজ্ঞতার চমৎকার ভারসাম্য রয়েছে। আমাদের জন্য খুব কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে এটি। তাদের হারাতে হলে অবশ্যই নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে। এই ম্যাচটি আমাদের কাছে বিশ্বকাপ ফাইনালের মতোই। হেরে গেলে টুর্নামেন্টের বাকিটা আপনাকে দর্শক হিসেবে দেখতে হবে। গ্র“পপর্বে নিউজিল্যান্ডের কাছে এক উইকেটের হারটি বাদ দিলে অস্ট্রেলিয়ার পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। তবে নকআউট পরীক্ষার আগে গ্র“পপর্বের পারফরম্যান্স থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজতে নারাজ ক্লার্ক, আগে কি হয়েছে এখানে তার কোনো মূল্য নেই। এটা নতুন দিন, নতুন ম্যাচ। একদম শূন্য থেকেই আপনাকে শুরু করতে হবে।
 অ্যাডিলেডের ড্রপ ইন পিচে হালকা সবুজের ছোঁয়া থাকায়, পেসাররাই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার যেমন জনসন, স্টার্ক ও ফকনারের মতো তিনজন বাঁ-হাতি পেসার আছেন, পাকিস্তানের পেস ব্যাটারিও তেমনি দুর্ধর্ষ। নিতম্বের ইনজুরিতে মোহাম্মদ ইরফানের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে গেলেও ওয়াহাব রিয়াজ, রাহাত আলী ও সোহেল খানকে নিয়েই অস্ট্রেলিয়াকে ধসিয়ে দেয়ার স্বপ্ন দেখছেন মিসবাহ, আমরা ইতিবাচক মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামব। আমি মনে করি, আমাদের বোলিং লাইনআপ যেকোনো দলকে গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম। ইরফানকে হারানো বড় একটি ধাক্কা। তাই বলে তো আর না খেলে বসে থাকতে পারেন না আপনি। আমাদের আরও অনেক ভালো বোলার আছে। আপনি যদি চ্যাম্পিয়ন হতে চান, তবে যে কোনো দলকেই হারাতে হবে। নিজেদের মাঠে অস্ট্রেলিয়া সবসময়ই শক্তিশালী। তার আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে। জিততে হলে তাই আমাদেরও আক্রমণাত্মক খেলতে হবে। নিজেদের দিনে আমরা কী করতে পারি সেটা সবাই জানে।

Leave a comment