সাপে কাটা সিমটম নেই শুনে বাড়লো রোগীর বাঁচার আকুতি : নিকটজনদের নাভিশ্বাস
কামরুজ্জামান বেল্টু: চিকিৎসক বললেন, সাপে কাটার আলামত নেই। পায়ে যে ক্ষতচিহ্ন দেখা যাচ্ছে তা কাঠি বা অন্য কিছুর আঘাতের দাগ। রোগী তা মানতে নারাজ। রোগীর লোকজন? তাদের মধ্যেও দুশ্চিন্তার ছাপ। শেষ পর্যন্ত হাসপাতালে রোগী না রেখে নেয়া হলো ওঝার উদ্দেশে। সেখানে কি হলো? তা অবশ্য নিশ্চিত করে জানা না গেলেও অনেকেরই মন্তব্য, ‘কি আর হবে? কাটা ছেড়া আর ঝাঁড়ফুঁকের নাটক করে কিছু হাতিয়ে নিলেই রোগী পাবে সুস্থ হয়ে ওঠার বিশ্বাস। সেই বিশ্বাসেই খাড়া হয়ে বসবে। ব্যাচ!’
সাপে কাটলেই সব সাপে বিষ প্রয়োগ করে না। আবার সাপে না কাটলেও হিস্টোরিয়ায় অনেকে সাপে কেটেছে বলে হপুই তোলে। আবার বিষধর সাপে দংশন করে বিষ প্রয়োগ করলেও অনেকে হাসপাতালে না নিয়ে ওঝা কবিরাজের নিকট নিয়ে ঝাঁড়ফুঁক নাটকে মেতে ওঠে। এসব কারণেই সর্প দংশিত রোগী নিয়ে বিভ্রান্তির শেষ নেই। সাপে কাটলেও বিষ প্রয়োগ করেনি এমন রোগী ঝাঁড়ফুঁক নাটক করে কিছু অর্থ হাতিয়ে নিয়ে ওঝা দেখায় তার জারিজুরি। আর বিষধর সাপে দংশন এবং বিষপ্রয়োগের শিকার রোগীর মৃত্যু হলে ভণ্ড ওঝা-কবিরাজ সাপকে অলৌকিক বিষধর বলে দাবি তুলে নিজেকে রক্ষা করে। গ্রামবাংলার এ চিত্র দীর্ঘদিনের। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে সচেতনতার আলো কিছুটা হলেও ছড়িয়েছে। সাপে কাটলেই ওঝা-কবিরাজের পাতা ফাঁদে পা নিয়ে অধিকাংশ রোগীকেই নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। এতে সুফল মেলে। গতরাতে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের পীরপুরের শিমুলের স্ত্রী হাসিনা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে যাওয়ার পর সাপে কেটেছে বলে চিৎকার দেন। প্রয়োজনীয় স্থানে বাঁধন দিয়ে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. রাজিবুল ইসলাম দেখে বলেন, রোগী ভর্তি করে নিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখেন। রোগীর শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে না দেখে রোগীর লোকজন অস্থির হয়ে ওঠেন। এ সময় চিকিৎসক বলেন, সাপে দংশন করলে যে আলামত পাওয়া যাওয়ার কথা তা নেই। তাহলে ওষুধ দিতে হবে কেন? চিকিৎসকের এ কথায় রোগী হাসিনা যেন দিশেহারা হয়ে পড়েন। রোগীর আকুতি দেখে তার লোকজন হাসপাতালে ভরসা রাখতে না পেরে নেন ওঝার উদ্দেশে।
অবাক হলেও সত্য যে, ওঝা-কবিরাজের দলও সাপে কাটলে হাসপাতালে এসে চিকিৎসকের নিকট বাঁচার আকুতি জানায়। অথচ কিছু ব্যক্তি আছে যারা ওঝার ওপর ভরসা করতে গিয়ে প্রাণটাই বিপন্ন করে তোলেন। আর সাপে কাটলেও বিষ প্রয়োগ করেনি এমন রোগী পেলে তো ওঝার পোয়া বারো। সুস্থ করেছে বলে দাবি তুলে জোর প্রচার প্রচারণাই শুধু চালায় না, দালালও ফিট করে হাসপাতালের আশে পাশে। প্রতি গরমেই অভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে। এবারও কি তাই? অবস্থা দৃষ্টে এ প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।