স্টাফ রিপোর্টার: নেই পর্যাপ্ত অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ এবং প্রশিক্ষক। কয়েকটি কক্ষ ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম চলছে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্সের। নীতিমালা অনুযায়ী অনুমোদনের যোগ্য নয়, এমন কয়েকশ প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দিয়েছে কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। এছাড়া নিয়মিত পরিদর্শন বা নজরদারি করার কথা থাকলে পরিদর্শন হয়েছে দেখানো হয়। বোর্ডের কর্মকর্তাদের খুশি করতে পারলেই ভালো তালিকায় থাকা যায়। তাই প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নজর নেই পলিটেকনিকগুলোর।
চাহিদা অনুযায়ী অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষক না থাকায় শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সময় পেরুলেই পাস করে যাচ্ছে। কিছু না শিখেই পাচ্ছে সার্টিফিকেট। এ কারণে সার্টিফিকেট নিয়ে অনেকেই চাকরির জন্য দক্ষতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছে না। দেশে বেসরকারি ৩৭৩টি পলিটেকনিক রয়েছে। একটি নীতিমালার আলোকে এসব প্রতিষ্ঠান অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের। নীতিমালার শর্তপূরণ হলেই কেবল অনুমোদন পাবে এমন নির্দেশনা থাকলেও তা মানে না বোর্ডের সংশ্লিষ্ট শাখার কর্মকর্তা ও পলিকেটনিকের মালিকরা। রাজধানীর বিজয় সরণীর একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা ইন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংসহ ৫টি বিষয়ের ওপর চার বছর মেয়াদী কোর্স রয়েছে। নীতিমালা অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানটির অন্তত ২০টি ল্যাবরেটরি থাকার কথা। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানের ভালো মানের ৫টি ল্যাবরেটরিও নেই। যা আছে তাতেও পর্যাপ্ত উপকরণও নেই।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ইঞ্জিনিয়ার খোন্দকার রেজাউল কাওনাইন বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে নীতিমালার শর্ত পালন করতে পারছি না। ছাত্র সংখ্যা কম রয়েছে। সব বিষয় চালাতেও পারছি না। যে আয়, তার চেয়ে ব্যয় বেশি। তবে আমরা ভালো করার চেষ্টা করছি। ভালো করার জন্য প্রতিষ্ঠানের ঠিকানাও পরিবর্তন করেছি।
পূর্ব তেজতুরি বাজারের একটি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা কোর্স চালানোর অনুমোদন রয়েছে। ভালো মানের প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের স্কিলস এ্যান্ড ট্রেনিং এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (স্টেপ) প্রকল্প থেকে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তিও দেয়া হয়। কিন্তু গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার ৩০ ভাগ শর্তই পূরণ করছে না।
এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পরিচয়ে এসএম খালেদ বলেন, শুধু আমার প্রতিষ্ঠানই নয়, যেগুলোতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী আছে, তারাও নীতিমালার সব মানে না। আমার যে ল্যাবগুলো ঘাটতি আছে তা আমি অন্য সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের নিয়ে ক্লাস করিয়ে আনি। তবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নীতিমালায় উল্লেখিত ল্যাবরেটরি থাকা উচিত।
ল্যাবরেটরি ছাড়াও প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের শর্ত হিসাবে দেড়শ থেকে ২শ বর্গফুটের অধ্যক্ষ, অফিস, একাডেমিক, লাইব্রেরিসহ ৯টি সাধারণ কক্ষ থাকতে হবে। এছাড়া প্রতিটি টেকনোলজির জন্য ৪০০ বর্গফুটের শ্রেণীকক্ষ থাকতে হবে। পদার্থ ও রসায়নের জন্য পৃথক সাধারণ ওয়ার্কশপ। কিন্তু দেশের অধিকাংশ পলিটেকনিক নীতিমালার অর্ধেক শর্তও পূরণ করছে না। বোর্ডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছক এক কর্মকর্তা বলেন, কোন প্রতিষ্ঠানই নীতিমালা মানছে না। নিয়মিত পরিদর্শন করলে ৯০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকেই বাতিল করতে হবে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান এখনো সার্টিফেকেটধারী শিক্ষার্থী তৈরি করছে।
কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে গঠিত হয়েছিল কারিগরি শিক্ষা বোর্ড। এই শিক্ষাবোর্ড চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং, ডিপ্লোমা ইন এগ্রিকালচার, ডিপ্লোমা ইন টেক্সটাইল, ডিপ্লোমা ইন ফিসারিজ, ডিপ্লোমা ইন জুট টেকনোলজি কোর্স, তিন বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন হেলথ টেকনোলজী, ডিপ্লোমা ইন ফরেস্ট্রি, ২ বছর মেয়াদী দাখিল, ভোকেশনাল কোর্স অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা কী শিখে বের হয় তার কোন খোঁজ খবর রাখে না কারিগরি শিক্ষাবোর্ড। কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারমান মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এটা সত্য যে সব প্রতিষ্ঠান নীতিমালা মানছে না। আমরা কারিগরি শিক্ষাকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে চাই। যে সব প্রতিষ্ঠান নীতিমালার শর্ত পূরণ করছে না, তাদের চি?িহ্নত করা হবে এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা ভালো করতে পারবে না, সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। তবে কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নের জন্য সবার সহযোগিতা দরকার।