বাড়ির উঠোনে চাচা-ভাতিজার কোপাকুপি : চাচা নিহত ভাতিজা মৃত্যুশয্যায়

চুয়াডাঙ্গা জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়ায় দোকানির পাওনা টাকা দেয়ার সময় বাগবিতণ্ডা : চড়থাপ্পড়

 

আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি/স্টাফ রিপোর্টার: জীবননগর আন্দুলবাড়িয়ার মিস্ত্রিপাড়ায় চাচা-ভাতিজার কোপাকুপিতে চাচা আব্দুস সালাম (৪২) নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ভাতিজা শহিদুল ইসলাম (৪০)। গতরাত ৮টার দিকে খালপাড়া তেঁতুলতলার চা দোকানের সামনে বাগবিতণ্ডার জের ধরে ভাতিজার বাড়ির উঠোনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন এরা।

নিহত আব্দুস সালাম আন্দুলবাড়িয়া মিস্ত্রিপাড়ার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে। আহত ভাতিজা একইপাড়ার মৃত দাউদ হোসেনের ছেলে। নিহত সালাম ও আহত শহিদুল চাচাতো চাচা-ভাতিজা। নিহত সালাম ইতঃপূর্বে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে কোপা সালাম হিসেবে পরিচিত ছিলো। স্থানীয়রা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, ভাতিজা শহিদুলও মারহাট্টা। চাচা-ভাতিজার কেউই কম নন।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া মিস্ত্রিপাড়ার আবুল হোসেনের দু ছেলে আব্দুস সালাম ও আবুল কালাম গতকাল সন্ধ্যার পর গ্রামেরই তেঁতুলতলা খালপাড়ার আব্দুল বারিকের চা-মুদি দোকানে যান। সেখানে পূর্ব থেকেই অবস্থান করছিলেন মৃত দাউদ হোসেনের ছেলে শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন। সালামের নিকট পাওনা ১৫২ টাকা চান দোকানি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, দোকানি পাওনা টাকা চাইলে সালাম খানেকটা ক্ষুব্ধ হন। কিছুক্ষণ পর সালাম টাকা বের করে পাশে থাকা ভাতিজা শহিদুলকে টাকাটা নিয়ে দোকানির হাতে দিতে বলেন। শহিদুল তা করতে অপারগতা প্রকাশ করলে সালাম রুখে যান শহিদুলের দিকে। দু একটা চড়থাপ্পড়ও মারেন সালাম। শহিদুল ক্ষোভের আগুনে ফুঁসে ওঠেন। বাড়ির দিকে রওনা হন। আব্দুস সালামও তার পিছু নেন। সালামের পাশে দাঁড়ান তার ভাই কালাম। শহিদুল বাড়ির ভেতর ঢুকেই দৌঁড়ে গাছ কাটা বড় দা নিয়ে রুখে আসেন। শুরু হয় সালাম ও শহিদুলের মধ্যে কোপাকুপি।

সালামের ভাই কালামের ছেলেসহ সালামের স্ত্রী অভিযোগ করে বলেছেন, শহিদুল ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। আর তার অপর দু ভাই মহিদুল ও আশাবুল লাঠি দিয়ে আঘাত করে। ঘটনাস্থলে লুটিয়ে পড়লে স্থানীয়দের সহযোগিতায় তাকে উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের উদ্দেশে নেয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছুলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন। আব্দুস সালামের পায়ে বড় ধরনের কোপ মারা হলেও মাথায় আঘাতের কারণে কান মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। এ কারণেই সালাম পথিমধ্যেই মারা গেছে। অপরদিকে শহিদুল প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের কোপে ক্ষত-বিক্ষত হয়। তার পায়ে, ডানায়সহ বেশ কয়েকটি স্থানে ধারালো অস্ত্রের কোপ মারা হয়েছে। ঘটনার পর তাকে একটি ঘরে আটকে রাখা হয়। পরে অবশ্য নেয়া হয় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে। কতর্বব্যরত চিকিৎসক বলেছেন, রক্তক্ষরণে শহিদুলের অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে। দ্রুত রক্ত দিতে হবে। একই সাথে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে হবে। অবশ্য গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত শহিদুল চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালেই মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছিলো।

অপরদিকে খবর পেয়ে গতরাতেই জীবননগর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই হুমায়ুন কবির, এসআই লুৎফুল কবির, এসআই সিরাজুল, এসআই শতদল মজুমদার ও শাহপুর পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ ওলিয়ার সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঘটনার বর্ণনা শোনেন। এদিকে সদর হাসপাতালেও জীবননগর থানা পুলিশ উপস্থিত হয়ে নিহতের ভাই আবুল কালামের নিকট থেকে ঘটনার বর্ণনা শুনে লিপিবদ্ধ করেন। তবে গতরাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মামলা রুজু হয়নি। পুলিশ বলেছে, লাশ পুলিশ হেফাজতে নিয়ে হাসপাতাল মর্গেই রাখা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার ময়নাতদন্ত শেষে নিজ গ্রামে দাফন কাজ সম্পন্ন করা হবে।

Leave a comment