রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই প্রত্যাশা

 

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধে দেশবাসী যখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনযাপন করছেন, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যখন এক ধরনের নেতিবাচকতার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে এবং এর প্রভাব পড়ছে সমাজ-রাষ্ট্রের সর্বত্র; এমনি এক সন্ধিক্ষণে বিএনপি চেয়ারপারসনের সংবাদ সম্মেলন ঘিরে আশা করা গিয়েছিলো, হয়তো সার্বিক বিষয় বিবেচনায় দেশবাসী এ অনিশ্চিত পরিবেশ থেকে মুক্তি পাবে। কিন্তু বাস্তবতা যে, অবরোধ চলাকালে ৫৩ দিন পর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন করলেও তার বক্তব্যে দেশবাসীকে হতাশ হতে হলো। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আবারো সংলাপ ও নতুন নির্বাচনের তাগিদ পুনরুল্লেখ করে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করার পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দলের প্রতি বিষোদগার করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, যৌক্তিক পরিণতিতে না পৌঁছা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। মূলত তিনি তার অনড় অবস্থানের কথাটিই পুনর্ব্যক্ত করেছেন। অথচ চলমান আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা-নাশকতায় মৃত্যু, জ্বালাও-পোড়াও এবং সম্পদহানির মহোৎসবের কথা তার অজানা নয়। এসব বিষয়ের পাশাপাশি এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে চলমান আন্দোলনে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, উৎপাদনসহ মানুষের চরম নিরাপত্তাহীনতা থেকে আপাত উত্তরণের বিষয়াদি। ফলে বক্তব্য নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে যেমন মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে তেমনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সমালোচনা জানিয়েছেন অনেকে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এ বক্তব্যকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার আখ্যা দেয়া হয়েছে। বক্তব্য এবং বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ার মধ্যদিয়ে এটা স্পষ্ট যে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে সাধারণ মানুষের স্বার্থ কতোটা উপেক্ষিত। যারা রাষ্ট্র চালান, তাদের কাছ থেকে এমনটি প্রত্যাশা হতে পারে না। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পর্কে তার বক্তব্যের সূত্রে বলা যায়, যে পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা সব রাজনৈতিক দলের কাছে গ্রহণযোগ্য না হলেও অসাংবিধানিক বলার উপায় নেই। তবে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিলো। ফলে বলা যেতে পারে, নির্বাচন না হলেই বরং সাংবিধানিক সঙ্কটের মুখোমুখি হতে হতো। গণতন্ত্র ও সংবিধানের বিধিবিধান মেনেই যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা বিশেষজ্ঞরাও উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি এও সত্য যে, দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরের প্রতি আস্থার সঙ্কট যেখানে তীব্র সেখানে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি বের করতে বাধা ছিলো না। তখন উভয় দলকেই আমরা কঠোর থাকতে দেখেছি। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করতে দেশব্যাপি ব্যাপক নাশকতা, সরকার পতনের আন্দোলনের নামে সাধারণ মানুষকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ করে হত্যা, সহিংসতা সমর্থনযোগ্য হতে পারে কি?

খালেদা জিয়ার বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা দলীয় স্বার্থ ছাড়া জনমানুষের কোনো স্বার্থ খুঁজে পাননি। ফলে এ ধারার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসা কর্তব্য বলেই মনে করা সঙ্গত। সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়া বলেছেন, যেকোনো পদ্ধতিই সংশোধিত ও পরিশোধিত হতে পারে। খালেদা জিয়ার এ কথাটি ইতিবাচক হিসেবে ধরা যায়। এটি করতে হলে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই করতে হবে। গণতান্ত্রিক বিধিতে আলাপ-আলোচনা হচ্ছে যে কোনো সঙ্কট থেকে উত্তরণের অন্যতম মাধ্যম। এজন্য পরস্পরের প্রতি দোষারোপ ও বিষোদগারের সংস্কৃতি থেকে রাজনীতিকদের বেরিয়ে আসা দরকার। রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য যদি হয় মানুষের কল্যাণ তাহলে, দলীয় স্বার্থের আগে সাধারণ মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। জোটের রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে দেশব্যাপি যে হত্যা, নাশকতা, ধ্বংস চলেছে, প্রধান দল হিসেবে এর দায় বিএনপি এড়াতে পারে না।

অন্যদিকে জননিরাপত্তা রক্ষায় ব্যর্থতার দায়ও সরকারি দলের কাঁধে। ফলে এটা স্পষ্ট যে, এ সঙ্কট রাজনৈতিক কারণেই আর তা রাজনীতিকদের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা দিয়েই উত্তরণ ঘটাতে হবে। প্রসঙ্গত বলতে চাই, সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব মহলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আমাদেরও প্রত্যাশা। তার আগে চাই জনগণের নিরাপত্তা। যে জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে রাজনীতিকদের এত মাথাব্যথা উভয় দলকে সেই জনগণের কথা আগে ভাবতে হবে। জনভোগান্তি ও আতঙ্কের রাজনৈতিক কর্মসূচি প্রত্যাহার করে সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হোক এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।