দুজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩ : টায়ার জ্বালিয়ে ছাত্রলীগের সড়ক অবরোধ : পুলিশের ফাঁকা গুলিবর্ষণ

মেহেরপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধে জের : ধারালো ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তরুণলীগ ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ

 

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর শহর তরুণলীগের অফিস ভাঙচুরকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও তরুণলীগের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফিজুর রহমান পোলেনসহ তিনজন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে। আহতদের স্থানীয় ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। শহরের ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গতকাল রোববার দুপুরের দিকে মেহেরপুর শহরের কলেজ মোড়ে অবস্থিত তরুণলীগের অফিস ভাঙচুর করে ছাত্রলীগ। এ ঘটনার পর থেকে তরুণলীগ ও ছাত্রলীগের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। ঘটনার জের ধরে সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। সংঘর্ষে উভয়পক্ষ আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে। সংঘর্ষে শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফিজুর রহমান পোলেন (২৮) প্রতিপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত জখন হন এবং তার চাচাতো ভাই মাসুদ রানা (২৪) ও জুয়েল (২০) নামের একজন অটোচালক গুলিবিদ্ধ হন। রক্তাক্ত জখম শহর ছাত্রলীগের সভাপতি পোলেনকে স্থানীয় রমেশ ক্লিনিকে এবং তার চাচাতো ভাই গুলিবিদ্ধ মাসুদ রানা ও অটোচালক গুলিবিদ্ধ জুয়েলকে মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মেহেরপুর জেলা তরুণলীগের সভাপতি গোপাল জানান, পূর্ব থেকে অর্থাৎ তরুণলীগের কমিটি গঠনের পর থেকে ছাত্রলীগ তাদের সাথে মনোমানিল্য চালিয়ে যাচ্ছিলো এবং এক প্রকার পায়ে পায়ে দিয়ে তারাই এ বিরোধ সৃষ্টি করেছে।

শহর তরুণলীগের সভাপতি নূর হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগের সাথে রাজনীতি না করার করায় মেহেরপুর শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফিজুর রহমান পোলেনের নেতৃত্বে বেশ কিছু ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তরুণলীগের কলেজ মোড়স্থ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে তরুণ লীগের ছেলেরা তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে।

জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজন সাংবাদিকদের জানান, পুলিশের দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তার উপস্থিতিতে তরুণ লীগের ছেলেরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্রলীগের ছেলেদের ওপর হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করেছে।

মেহেরপুর সদর থানার ওসি আহসান হাবিব সাংবাদিকদের জানান, গত ৯ মার্চ মেহেরপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ড তরুণ লীগের সভাপতি খাদেমুল ইসলামকে আটকের পর তরুণলীগ শহরের কলেজ মোড়ে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে এবং কয়েকটি পরিবহণ ভাঙচুর করে। সেই থেকে ছাত্রলীগ ও তরুণ লীগের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং এর জের ধরে ছাত্রলীগ ও তরুণ লীগের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।

মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজবাহার আলী শেখ জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ৬ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। কলেজ মোড়সহ শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

এদিকে মেহেরপুর শহর ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফিজুর রহমান পোলেনের ওপর তরুণলীগের হামলার প্রতিবাদে গতকাল বিকেলে মেহেরপুর-কাথুলী সড়কের কায়েমকাটার মোড়ে গাছ ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে মেহেরপুর জেলা ছাত্রলীগ। জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানার নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগ নেতা রাজন, সুইট, রুবেল, নাজমুল, বাপ্পি প্রমুখ। এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বারিকুল ইসলাম লিজনের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ শহরের হোটেল বাজার মোড় ও পাবলিক লাইব্রেরির সামনে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পুলিশের বাধার মুখে তা পণ্ড হয়।

এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লিজন গতকাল সন্ধ্যায় আরো জানান, ছাত্রলীগের ওপর তরুণলীগের হামলার ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে এবং তরুণ লীগের হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিকেলে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হবে।