রাজনীতিবিদরা এ রাজনীতি থেকে আমাদের রেহাই দিন

টানা অবরোধ আর উপর্যুপরি হরতালে কেটে গেলো প্রায় আড়াই মাস। এতো দীর্ঘ সময় ধরে জীবনের প্রয়োজন থামিয়ে রাখা যায় না। তাই বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের হরতাল-অবরোধ উপেক্ষা করেই মানুষ নেমে এসেছে রাস্তায়। ফিরে গেছে নিজ নিজ কর্মস্থলে। এখন দেশের কোথাও হরতাল-অবরোধের কোনো চিহ্নও চোখে পড়ে না। কিন্তু আছে লাগামহীন নিষ্ঠুরতা ও সহিংসতা। বর্বরোচিতভাবে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউ রেহাই পাচ্ছে না রাজনীতির নামে চালানো এ নৃশংসতা থেকে। এরই মধ্যে সহিংসতার বলি হয়েছে শতাধিক নিরীহ মানুষ। অর্ধদগ্ধ হয়ে কিংবা মরতে মরতে কোনো রকমে বেঁচে গেছে আরো অনেক মানুষ, যাদের অনেকেই হয়তো জীবনে কোনো দিনই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারবে না। এমনই অমানবিক ও ভীতিকর অবস্থায় মানুষ অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে ছিলো বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গতকাল শুক্রবারের সংবাদ সম্মেলনের দিকে। তারা আশা করেছিলো, দেশের মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে তিনি হয়তো হরতাল-অবরোধ প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু তারা হতাশ হয়েছে। অবরোধ প্রত্যাহার করা হয়নি।

এদিকে দীর্ঘ এক মাসেরও বেশি সময় রাতে দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখলেও বৃহস্পতিবার রাত থেকেই দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস পুনরায় চলাচল শুরু করেছে। ইতোমধ্যে দেখা গেছে, রাতে রাস্তার পাশে লুকিয়ে থেকে অবরোধ সমর্থকরা যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা ছুড়ে পালিয়ে যায়। এতে বড় ধরনের বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। তাই সরকার রাতে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলো। কিন্তু পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের পক্ষে সেই নিষেধাজ্ঞা মেনে চলা অসম্ভব হয়ে পড়ে। এতে তাদের দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় সাড়ে তিনশ কোটি টাকার বেশি। আয় না হলেও তাদের ব্যাংকঋণের বোঝা বাড়তেই থাকে। দৈনিক ভিত্তিতে কাজ করা পরিবহন শ্রমিকদের অবস্থা আরো করুণ। কাজ না থাকলে পারিশ্রমিক নেই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অনাহার করা ছাড়া উপায় থাকে না। তাই তাদের পক্ষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হলেও রাস্তায় নামার কোনো বিকল্প নেই। যারা হরতাল-অবরোধ ডেকে চলেছে তারা কি এদের কথা মোটেও ভাববে না?

এদিকে ১ এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা এইচএসসি পরীক্ষা, অথচ এসএসসি পরীক্ষাই এখনো শেষ করা যায়নি। কবে শেষ করা যাবে তা-ও নিশ্চিত করে বলা যায় না। বছরের আড়াই মাস চলে গেলেও বহু স্কুল এখনো ক্লাসই শুরু করতে পারেনি। অনেক স্কুল ঝুঁকি নিয়ে খোলা রাখলেও অভিভাবকরা ছেলেমেয়েদের বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চান না। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থাও প্রায় একই রকমের। তিন মাসের একটি সেমিস্টার প্রায় পেরিয়ে গেছে নিয়মিত শিক্ষাদান ছাড়াই। ফলে দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাই আজ প্রায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে দেশের শিক্ষা, অর্থনীতি বিপর্যস্ত করে কিংবা মানুষকে চরম দুর্ভোগে ফেলে যে রাজনীতি, তা আমাদের কাম্য নয়। রাজনীতিবিদরা এ রাজনীতি থেকে আমাদের রেহাই দিন।