কোয়ার্টার ফাইনালে টাইগারদের সামনে ভারত না দক্ষিণ আফ্রিকা

স্টাফ রিপোর্টার: প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের টিকিট মিলেছে বলেই অ্যাডিলেডে টাইগারদের ইংল্যান্ড-বধের কীর্তি পেয়েছে ঐতিহাসিক জয়ের মর্যাদা। অন্যথায় নিজেদের চেয়ে ধারে-ভারে এগিয়ে থাকা শক্তিশালী দলের বিপক্ষে বহু স্মরণীয় জয় রয়েছে বাংলাদেশের। তবে স্নায়ুচাপের ম্যাচে যে পেশাদারী মনোভাব নিয়ে ইংল্যান্ডকে ১৫ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ, তার অন্যরকম মাহাত্ম্য রয়েছে। এক জয়েই বাংলাদেশের ক্রিকেট সম্পর্কে সবার ধারণা পালটে গেছে। জিওফ বয়কট ও ইয়ান বোথামের নাক-উঁচু ইংলিশ গ্রেটরা পর্যন্ত বলতে বাধ্য হচ্ছেন, শাবাশ বাংলাদেশ! অতীতে প্রতিবেশী ভারত-পাকিস্তানের সাবেকরাও খোঁচা মারতে ছাড়েননি বাংলাদেশকে। রাতারাতি তাদের সুরও গেছে পাল্টে। কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে কেউ আর সহজ প্রতিপক্ষ ভাবছে না।

অ্যাডিলেড জয় করে কালই তাসমান সাগর পাড়ি দিয়ে নিউজিল্যান্ডে উড়ে গেছেন মাশরাফিরা। ১৩ মার্চ হ্যামিলটনে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কিউইদের হারাতে পারলে এ-গ্রুপের তৃতীয় দল হিসেবে শেষ আটে খেলবে টাইগাররা। সেক্ষেত্রে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ হতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে গ্রুপে চতুর্থ হলে কোয়ার্টার ফাইনালে বি-গ্রুপের শীর্ষ দল ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।

টানা পাঁচ জয়ে এ গ্রুপের শীর্ষস্থান আগেই নিশ্চিত করে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ সমান সাত পয়েন্ট। তবে রানগড়ে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় ও বাংলাদেশ আছে তৃতীয় স্থানে। ছয় পয়েন্ট নিয়ে চারে শ্রীলঙ্কা। কাগজে-কলমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় হওয়ার সম্ভাবনাও আছে। যদি শেষ ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। তবে স্বাভাবিকভাবে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় স্থান ধরে রাখবে ধরে নিয়ে বলা যায়, তৃতীয় স্থানের জন্য লড়াইটা হবে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে। নিজেদের শেষ গ্রুপ ম্যাচে স্কটল্যান্ডের কাছে হেরে গেলে নিশ্চিতভাবে চতুর্থ হবে শ্রীলঙ্কা। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা জিতলে তৃতীয় হওয়ার জন্য শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের কোনো বিকল্প থাকবে না বাংলাদেশের সামনে। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে চতুর্থ হলে কোয়ার্টার ফাইনালে নিশ্চিতভাবেই বি-গ্রুপের শীর্ষ দল ভারতের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কিন্তু তৃতীয় হলে শেষ আটে মাশরাফিদের প্রতিপক্ষ কে হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। কারণ বি-গ্রুপের দ্বিতীয় স্থান এখনও নির্ধারিত হয়নি। পাঁচ ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও আয়ারল্যান্ডের সংগ্রহ সমান ছয় পয়েন্ট করে। রানরেটে অনেক এগিয়ে থাকায় আপাতত দ্বিতীয় স্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তিনে পাকিস্তান। শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতের বিপক্ষে জিতলে দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় স্থান মোটামুটি নিশ্চিত। সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায়, গ্রুপে তৃতীয় হলে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হবে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর চতুর্থ হলে ভারত।

আপাতত ১৯ মার্চ মেলবোর্নে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালই দেখছে সবাই। তবে সেই সবার কাতারে ফেলা যাবে না সৌরভ গাঙ্গুলীকে। নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে গ্রুপে বাংলাদেশের তৃতীয় হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ভারতের এ সাবেক অধিনায়ক, মেলবোর্নে শেষ আটে দু উপমহাদেশীয় প্রতিবেশী বাংলাদেশ অথবা শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ভারত। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে লড়াকু মানসিকতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে নিউজিল্যান্ডকেও হারিয়ে দিতে পারে তারা। সেক্ষেত্রে হয়তো ভারত-শ্রীলঙ্কা কোয়ার্টার ফাইনাল হবে।

শেষ আটে শ্রীলঙ্কার বদলে বাংলাদেশকে পেলেই খুশি হওয়ার কথা ভারতের। সুনীল গাভাস্কার বলছেন অন্য কথা। শেষ আটে ইংল্যান্ডকে পেলেই নাকি বেশি খুশি হতেন ভারতীয় ব্যাটিং গ্রেট! বাংলাদেশের ব্যাপারে ধোনিদের সতর্ক করে দিয়ে গাভাস্কার বলেছেন, কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ড থাকলে ভারতের খুব সুবিধা হতো। বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেয়া ঠিক হবে না ধোনিদের। ওদের ব্যাটিং খুব ভালো হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের উইকেটে ওদের বোলাররাও যথেষ্ট ভয়ঙ্কর।

ভারতের আরেক সাবেক ক্রিকেটার দীপ দাশগুপ্ত কলকাতার এক বাংলা দৈনিকে নিজের কলামে লিখেছেন, আবেগ, আগুন আর আত্মবিশ্বাস- এ তিনটি ব্যাপার মাশরাফিদের সম্পদ। ভারতের সমনে পড়লে তারা আরও জেদ নিয়ে নামবে। চাইবে এমন কিছু করতে যাতে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপ কোনো দিন বাংলাদেশকে ভুলতে না পারে!

এখনও কোয়ার্টার ফাইনালের লাইন-আপ চূড়ান্ত হয়নি। অথচ বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালের সম্ভাবনা নিয়ে কত কথা! সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন শোয়েব আখতার। পাকিস্তানের সাবেক পেসার রীতিমতো বাংলাদেশ-পাকিস্তান সেমিফাইনাল দেখছেন! শোয়েবের সহজ হিসাব, ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালে যাবে বাংলাদেশ আর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে পাকিস্তান যাবে সেমিতে। এরপর মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-পাকিস্তান। শোয়েব আখতার কি ভুলে গেছেন, এখনও কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়নি পাকিস্তানের!

চারদিকে ভারত-ভারত রব উঠে গেলেও বাংলাদেশের পুরো মনোযোগ নিউজিল্যান্ড ম্যাচের দিকেই। শেষ আটের স্বপ্নপূরণের পর গ্রুপে তৃতীয় হওয়ার সুযোগটাও দুহাতে লুফে নিতে চান অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা, নিঃসন্দেহে ম্যাচটি খুব কঠিন হবে, কারণ নিউজিল্যান্ড নিজেদের মাঠে খেলছে। কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জের জন্য পুরো প্রস্তুত হয়েই নামব আমরা। বিশ্বকাপে ছন্দটা ধরে রাখা খুব জরুরি।

শেষ পর্যন্ত নিউজিল্যান্ডকে হারানো না গেলেও ভালো খেলে এই ম্যাচ থেকে কোয়ার্টার ফাইনালের রসদ জোগাড় করতে চান মাশরাফি, কোয়ার্টার ফাইনালে হয়তো ভারতের সঙ্গে খেলতে হবে। তার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভালো করে আÍবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে নিতে হবে। ভারত বা যে দলই হোক, কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা সেরাটাই খেলার চেষ্টা করবো।