ক্রিকেট পরিবারের অবশ্যই বনেদী সদস্য ইংল্যান্ড। তাদের হারিয়ে একটি ম্যাচ হাতে থাকতেই প্রথমবারের মতো আইসিসি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। এই অনন্য অর্জনের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশকে ক্রিকেট-বিশ্বে বিশেষ মর্যাদার আসনেই শুধু অধিষ্ঠিত হলো না, দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে দেশবাসী পেলো যেন স্বস্তি। সারাদেশ আনন্দের বন্যায় ভেসেছে। এ আনন্দ কোনো দলে গণ্ডবদ্ধ থাকে না, থাকেনি।
নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না, দল-মত-শ্রেণি-পেশা ও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে এশের মানুষ কতোটা ক্রিকেটপাগল। সকল ভেদাভেদ ভুলে এখন অভিন্ন আনন্দের জোয়ারে ভাসছে দেশ, দেশের মানুষ। এ আনন্দ-উত্তেজনা যে দেশের চৌহদ্দির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি, থাকে না। ছড়িয়ে গেছে সবখানে। এমন উপলক্ষ আমাদের জীবনে খুব কমই আসে। অন্য অনেকের তুলনায় এদেশের ক্রিকেটারদের সুযোগ-সুবিধার সীমাবদ্ধতার বিষয়টি সুবিদিত। তা সত্ত্বেও সকল সীমাবদ্ধতাকে টপকে, যারা আমাদের জন্য আনন্দের ও গর্বের এ সুযোগটি সৃষ্টি করেছেন, বিশ্বের মাঝে আমাদের মাথা উচু করার সুযোগ সৃষ্টি করেছে সেই জাতীয় ক্রিকেট দলের অদম্য তরুণদের অভিভাবদন।
২০০৭ বিশ্বকাপে সুপার সিক্সে খেলেছে বাংলাদেশ। এবারের অভিজ্ঞতা একেবারেই অন্যরকম। বৃষ্টির কারণে অস্ট্রেলিয়ার সাথে খেলতে হয়নি। কিন্তু কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পথে দল হিসেবে নিজের পেশাদারিত্ব এবং সামর্থ্যেরও স্বাক্ষর রেখেছে। স্কটল্যান্ডের ছুড়ে দেয়া তিন শতাধিক রানের চ্যালেঞ্জ তাড়া করে জিতেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডকে হারালো। ইংল্যান্ডের সাথে ম্যাচটি ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদলালেও বাংলাদেশ দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাসে যেন ঘাটতি ছিলো না। ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ যে আরো আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলো তা বলাই বাহুল্য। এই আত্মবিশ্বাস এ পর্বের নিউজিল্যান্ডকেও টাইগাররা ধরাশায়ী করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।
জয়ের আনন্দে আত্মহারা হলে চলবে না। জয়ের পাওয়া আত্মবিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে সামনের ম্যাচগুলোও জিততে হবে। আরও শাণিত করতে হবে নিজেদের দক্ষতাকে। ক্রমশ প্রসারিত করতে হবে স্বপ্নের দিগন্ত। প্রমাণ করতে হবে যে আমরাও পারি। আমরা বিশ্বাস করি, সুসময়ে দেশের আপামর মানুষ যেভাবে ক্রিকেট দলের সাথে একাত্মতা হয়েছেন, দুঃসময়েও তেমনি তাদের পাশে থাকবেন। ক্রিকেটের এই জয়ের মধ্যদিয়ে দেশে ফিরে আসুক রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা।