সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করা প্রয়োজন

 

২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে বিদ্যুত খাতে মোট বরাদ্দ ছিলো ৯ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। তা থেকে ৯৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ কমিয়ে দেয়া হয়েছে প্রস্তাবিত সংশোধিত এডিপিতে। এর ফলে সমস্যায় পড়তে হবে খাতটিকে; সেই আশঙ্কায় বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী বরাদ্দ না কমাতে পরিকল্পনা কমিশনকে চিঠি দিয়েছেন। এ চিঠি নিয়ে বিপাকে পড়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, কারণ তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের বেধে দেয়া সংশোধিত এডিপির সীমারেখার বাইরে যেতে অসমর্থ। বিষয়টির সমাধানের জন্য তারা এখন এনইসি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মতামতের মুখাপেক্ষী বলে জানা যায়। দেশের চলমান বাস্তবতায় অর্থনীতির হিসাব-নিকাশ ও নানা সূচকে নানা রকম হেরফের ঘটছে। সন্ত্রাস-নাশকতায় বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রতিদিন জাতীয় লোকসানের সূচককে ওপরের দিকে ঠেলছে। এর সাথে যদি যুক্ত হয় বিদ্যুতের ধকল, তাহলে সে ক্ষতি আরও দ্বিগুণ-তিনগুণ বেড়ে যাবে। তাতে যে শুধু উৎপাদন এবং আর্থিক ক্ষতি হবে তাই-ই নয়, এর সাথে যুক্ত হবে সামাজিক ক্ষতিও। বিদ্যুত এমন একটি অপরিহার্য উপাদান যা বর্তমানে শিল্প, কৃষি, এমনকি গার্হস্থ্য উৎপাদনের সাথেও ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। তাই এ খাতটিকে চোখের মণির মতো আগলে রাখা প্রয়োজন। সেদিক থেকে যদি বিবেচনা করা হয়, তবে বিদ্যুত খাতের বরাদ্দ অর্থ কমিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্তটি যৌক্তিক নয় মোটেই। তাছাড়া সরকারের ভিশন-২০২১ অনুসারে বিদ্যুত উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের যে লক্ষ্যমাত্রা, তা অর্জনে ব্যাঘাত ঘটবে এমন সিদ্ধান্তে। বর্তমান সরকারের সাফল্যের নেপথ্যে অন্যতম যে খাত সেটি হচ্ছে বিদ্যুত। উন্নয়ন, অবকাঠামোসহ যে কোনো খাত সম্পর্কেই কমবেশি কথা বলে পার পাওয়া যায়; কিন্তু এ খাত নিয়ে কথা বলে পার পাওয়া যায় না, কারণ বিদ্যুত তার প্রত্যক্ষ উপস্থিতি ছাড়া যে কোনো প্রতিশ্রুতি বা বক্তৃতাকে বাতিল করে দেয়। তাই আমরা মনে করি, সংশোধিত এডিপিতে অন্য অপ্রয়োজনীয় খাত থেকে অর্থ সংস্থান করতে পারে সরকার। কিন্তু বিদ্যুত খাত থেকে অর্থ ছেঁটে নেয়ার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। ফসল উৎপাদনের সেচ মরসুম সমাগত। সামনে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে, সেই বাড়তি চাহিদা সামাল দিতে না পারলে যে সার্বিক জনঅসন্তোষ তৈরি হবে সেটা বলাই বাহুল্য। তাই আমরা বলবো, বিদ্যুতের বরাদ্দ না কমিয়ে বরং এ খাতের বরাদ্দ সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে খাতটির আরও উন্নয়ন এবং লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিন।