বাংলাদেশের রান তাড়া লেখা থাকবে ইতিহাসে

যে বিশ্বকাপে হামেশায় ৩শ পেরোনো ইনিংসের দেখা মিলছে, সেখানে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৩২২ রান কী এমন! আছে, এ রানের বিরাট মাহাত্ম্য আছে। স্কটল্যান্ডের ৩১৯ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ হওয়ার পরই যে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে ওঠে তা হলো- বাংলাদেশকে জিততে হবে ইতিহাস গড়েই। বাংলাদেশ পেরেছে সেই ইতিহাস গড়তে। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান তাড়া করার রেকর্ড তো বটেই, বিশ্বকাপ ইতিহাসেও ঠাঁই করে নিয়েছে বাংলাদেশ। অভিনন্দন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে।

যেকোনো ইতিহাসের পেছনে থাকে বিশাল বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার অসাধারণ এক গল্প। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়। স্কটিশ ব্যাটসম্যানরা যখন রানের চাকা বাড়িয়ে নিচ্ছেন তরতরিয়ে তখনই এক দুঃসংবাদ। মাহমুদউল্লাহর করা ৩১তম ওভারের শেষ বলটা লং লেগে ছুটে এসে ড্রাইভ দিয়ে ফিল্ডিং করতে গিয়ে ডান কাঁধে মারাত্মক ব্যথা পেলেন এনামুল। সাথে সাথে হাসপাতালে ডানহাতি ওপেনার। প্রতিপক্ষের ইনিংস শেষ হওয়ার আগে এমন সংবাদে দলের মানসিক অবস্থা কী হয়? বুঝতে কারো বাকি থাকার কথা নয়। মানসিক চাপটা আরও বাড়িয়ে দিলো স্কটল্যান্ড, ছুড়ে দিলো ৩১৮ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য। ৩শ পেরোনো যেকোনো দলের কাছেই বিরাট চাপ হতে বাধ্য, সে প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া হোক কিংবা আমিরাত। চলতি বিশ্বকাপে প্রথমে ব্যাট করে অনেক দল অনায়াসে ৩০০-৪০০ রান করে ফেলছে। কিন্তু সে রান টপকাতে পেরেছে কটা দল? শুধু এ বিশ্বকাপে কেন? ৩শ রান তাড়া করে জেতার নজির বিশ্বকাপের ইতিহাসেই মোটে সাতটি। বাংলাদেশকে তাই রান তাড়া করতে গিয়ে প্রথম জয় করতে হলো চাপকে। এরপরও সাবলীলভাবে লক্ষ্যে পৌঁছে গেলো মাশরাফির দল। ব্যাটিং দেখে মনেই হয়নি, বিরাট লক্ষ্য তাড়া করছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের সব প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দুর্দান্তভাবে ইতিহাসে নাম লেখালো বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে ৩০০ রানের বেশি তাড়া করে জিততে পেরেছে মাত্র চারটি দল- শ্রীলঙ্কা, ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ ও আয়ারল্যান্ড। মজার ব্যাপার, এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি জিতেছে আইরিশরা, তিনবার। এ দুটো জয়ের একটি ইংল্যান্ড, আরেকটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সর্বোচ্চ ৩২৮ রানের লক্ষ্য (গত বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে) তাড়া করার রেকর্ডও আইরিশদের দখলেই। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কা জিতেছে দুবার, ইংল্যান্ড ও বাংলাদেশ একবার করে। এ পরিসংখ্যান কিন্তু পারারই হাতছানি। বাংলাদেশ অবশ্য আজকের পরিমিত ও পরিণতবোধের যে পরিচয় দিয়েছে, তাতে দাবি করতেই পারে, আমরাও পারি।

Leave a comment