স্টাফ রিপোর্টার: জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা বহাল আছে। বুধবার প্রায় দু ঘণ্টা শুনানি গ্রহণ শেষে ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদার পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদনসহ এদিন দায়েরকৃত সব আবেদন নথিভুক্ত করেন। শুনানিকালে সাতজন সাক্ষী হাজির থাকলেও বিচারক সাক্ষ্যগ্রহণ না করে ৫ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারণ করেন।
আদেশের পর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় খালেদা জিয়া আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। আইনগত কোনো ভিত্তি না থাকায় আদালত খালেদা জিয়ার সব আবেদন নথিভুক্ত করেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরোয়ানা বহাল থাকায় এখন যেকোনো সময় খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হতে পারে। আবার যেকোনো সময় তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করতে পারেন।
খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা বাতিলের আবেদন করেছিলাম। আদালত আমাদের আবেদন খারিজও করেননি আবার মঞ্জুরও করেননি। আবেদন নথিভুক্ত করে তারিখ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এমন অবস্থায় এ মামলার যাবতীয় বিষয় স্থিতাবস্থায় থাকবে।
আলোচিত মামলা দুটিতে পরপর তিনটি ধার্য তারিখে হাজির না হওয়ায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির প্রায় এক সপ্তা পার হলেও তা কার্যকর করা বা পরোয়ানা পুলিশের হাতে না পৌঁছানোর বিষয়ে গতকাল বুধবার আদালত কোনো মন্তব্য করেননি। এদিন আদালত তারেক রহমানের সশরীরে হাজির হওয়ার আদেশ প্রত্যাহার করে নেন। ফলে তিনি আগের মতোই আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে পারবেন বলে জানিয়েছেন বিচারক। এর আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত ৪ মার্চ তারেক রহমানকে সশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।
এদিকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে পরোয়ানা পুলিশের হাতে পৌঁছানো, খালেদা জিয়ার আদালতে আত্মসমর্পণ করা না করা এবং তাকে গ্রেফতার নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিও ছিলো গুলশান কার্যালয়ের দিকে। সকাল থেকেই মিডিয়াকর্মীরা বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভিড় জমান। বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচারের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কিছুই হয়নি। খালেদা জিয়া আদালতেও যাননি, পুলিশও তাকে গ্রেফতার করেনি।
অবশেষে খালেদা জিয়াসহ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া তিন আসামির অনুপস্থিতিতেই বুধবার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বকশিবাজার এলাকার আলিয়া মাদরাসা মাঠে নির্মিত অস্থায়ী এজলাসে দুর্নীতির দু মামলার বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয়। আদালতে মামলার শুনানিতে দফায় দফায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উভয়পক্ষের আইনজীবীরা বিতণ্ডাতেও জড়ান। শুনানির মধ্যে আদালতের কাছেই হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এদিন বকশিবাজার এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী আদালত ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়। ৱ্যাব-পুলিশ-বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আদালত চত্বরে ছিলেন তৎপর।
বুধবার সরেজমিনে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিগত সময়ের মতোই কার্যালয়ে ছিলো সুনসান নীরবতা। কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে চোখে পড়েনি কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে কার্যালয়ের সামনে ৮৬ নম্বর সড়কের মাথায় গুলশান থানা পুলিশের কিছুটা তৎপরতা চোখে পড়ে। গুলশান থানার ওসিকে কয়েকবার কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে অবস্থান করতে দেখা যায়। গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বরে রাখা হয় একটি জলকামান ও এপিসি। সেখানে পুলিশের নিরাপত্তাও ছিলো আগের চেয়ে কিছুটা বেশি। সকাল থেকে সেখানে আরাফাত রহমান কোকোর চেহলাম উপলক্ষে চলে কোরআনখানি।