দামুড়হুদার কলাবাড়ি-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র আলিমের পাগলামি
দামুড়হুদা অফিস/প্রতিনিধি: দামুড়হুদার কলাবাড়ি-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী রানী সুলতানা প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় তাকে রাস্তার মাঝে গলাটিপে ধরে মাটিতে ফেলে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে সহপাঠী বখাটে ছাত্র আলিমকে দু মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান ওই ছাত্রের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে ওই আদেশ দেন।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কলাবাড়ি-রামনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ইব্রাহিমপুর গ্রামের এক মেয়েকে প্রায় ৬ মাস ধরে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো একই শ্রেণির ছাত্র কলাবাড়ি গ্রামের বাদল খার ছেলে আলিম। প্রেমে সাড়া না মেলায় ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলো সে। এরই এক পর্যায়ে গত সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ছাত্রী স্কুল থেকে প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফেরার পথে কলাবাড়ি-রামনগরের মৃত হাজি আব্দুল গফুরের বাড়ির নিকটে পৌছুলে সহপাঠী ছাত্র আলিম তার পিছু নেয় এবং গতিরোধ করে। ছাত্রী কোনো উত্তর না দিলে আলিম তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে এবং গলাটিপে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। এ সময় রামনগর গ্রামের সিরাজুল ইসলাম এগিয়ে এলে আলিম পালিয়ে যায়। ছাত্রী বাড়িতে গিয়ে বিষয়টি তার পরিবারের কাছে জানালে তার পিতা ওই দিন দুপুরে বিদ্যালয়ে যান এবং বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির কাছে লিখিতভাবে জানান। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সালাউদ্দিন লিখিত অভিযোগ পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ইদ্রিস আলী, ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মফিজুর রহমান, রায়হান উদ্দিন, মহিউদ্দিন, আবুল কালাম আজাদ, শাহিনুজ্জামানসহ কলাবাড়ি, রামনগর, ইব্রাহিমপুর, মজলিসপুর ও গোপালপুর এই ৫ গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে বিকেলে জরুরি বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ওই ছাত্রকে স্কুল থেকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হতে পারেনি ভুক্তভোগী ছাত্রীর পিতা। শেষমেশ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গতকাল মঙ্গলবার সকালে বিষয়টি দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানায়। খবর পেয়ে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমান বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যালয়ে হাজির হন এবং উভয়পক্ষের কাছে ঘটনার বর্ণনা শোনার পর অভিযুক্ত ওই বখাটে ছাত্রের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে সহপাঠী ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অপরাধে দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় তাকে দু মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা কাজে সহযোগিতা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সিএ ফয়জুল ইসলাম ও ইব্রাহিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এএসআই লুৎফর রহমান।
এদিকে এলাকাবাসী আরো জানায়, মাস পাঁচেক আগে অভিযুক্ত আলিম ওই মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় এবং ওই মেয়ের পরিবারের লোকজন আলিমের পিতাকে জানালে আলিমের পিতা আলিমকে মারধর করার সময় আলিমও তার পিতাকে মেরে মাথা ফাটিয়ে দেয়। ওই ঘটনার কিছু দিন আগে আলিম ওই মেয়ের প্রেমে সাড়া না পেয়ে বিষপানও করে আত্মহত্যারও অপচেষ্টা চালায়। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আলিম জানায়, প্রায় বছরখানেক আগে আমি তাকে প্রথম প্রেমের প্রস্তাব দিই। প্রথম প্রথম সাড়া দিলেও শেষমেশ আমাকে প্রত্যাখান করে। এ ঘটনায় সহপাঠী বন্ধুরা আমাকে প্রতিনিয়ত হেরে গেলি হেরে গেলি বলে হেয় প্রতিপন্ন করতো। আমি বন্ধুদের কাছে ওই ধরনের অপমান না হলে হয়তো আমি এ রকম করতাম না।