শিক্ষাজীবনে একটি বছর অবশ্যই অনেক মূল্যবান

 

‘একটি বছর, এ আর এমন কি! দেখতে দেখতে কেটে যাবে’। যাদের কাছে সময় মূল্যহীন তাদের কেউ কেউ এরকম মন্তব্য করে বিষয়টিকে হালকাভাবে নিতেই পারেন। তারা প্রশ্ন তুলে বলতেই পারেন, শিক্ষাজীবনে সেশনজট হয় না? হয়, তাতে শিক্ষার্থীদের কেউ এককভাবে বা কয়েকজন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে জীবন গড়ার গতি বাধাগ্রস্ত করে না। আর স্কুলজীবনে যদি অহেতুক কোনো শিক্ষার্থীর একটি বছর কেড়ে নেয়া হয় তাহলে শিক্ষাজীবন থেকেই শুধু নয়, সুন্দর ভবিষ্যত গড়ার পথচ্যূত হওয়ারও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। সে কারণেই শিক্ষার্থীদের জীবনে একটি বছর অনেক বড়, অনেক মূল্যবান।

চলমান এসএসসিসহ সমমানের পরীক্ষা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার দাপটে ক্ষত-বিক্ষত। সময় নির্ঘণ্ট শুধু গুলিয়েই যায়নি, পরীক্ষার্থীদের মধ্যে দুশ্চিন্তা যেন লেগেই রয়েছে। এর মাঝে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মুন্সিগঞ্জ একাডেমী কেন্দ্রের ১১ জন পরীক্ষার্থীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কেন? এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নির্ধারিত আসন ছেড়ে অন্য আসনে জটলা করে বসে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলো। এ অনিয়মের কারণে দুজন শিক্ষকের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দু শিক্ষকের শাস্তি মুচলেকা নিয়ে কিছুটা কমানো হলেও পরীক্ষা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে ১১ পরীক্ষার্থীকে। দণ্ডিত পরীক্ষার্থীরা ঘটনার দিন সন্ধ্যা থেকেই আন্দোলন শুরু করেছে। তারা বলেছে, ‘তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া অন্যায় হয়েছে। কারণ, নির্ধারিত আসন ছেড়ে অন্য আসনে তো আর ইচ্ছে করে বসিনি, প্রশ্নপত্র স্বল্পতার কারণে শিক্ষকদের পরামর্শেই আসন বদল করে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছিলাম। এতে আমাদের তথা পরীক্ষার্থীদের দোষ কোথায়?’ অবশ্যই এ প্রশ্নের জবাব খোঁজা দরকার।

শাস্তিপ্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়েরই ৭ জন। ফলে আন্দোলনের সূত্রপাত মূলত এ বিদ্যালয়ের সামনে থেকেই শুরু হয়েছে। ক্রমশ তা বৃহদাকারে রূপ নিচ্ছে। আন্দোলনের সাথে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরাও একাত্মতা ঘোষণা করে রাস্তায় নেমেছে। এছাড়া আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়েও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ। প্রশ্নপত্র স্বল্পতার কারণেই হোক, আর অন্য প্রয়োজনেই হোক, শিক্ষার্থীদের আসন পরিবর্তনের বিষয়টি কেন হলসুপার প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে পদক্ষেপ নিলেন না? শাস্তি প্রদানের সময়ও কী প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা হয়েছে? তদন্ত হওয়া দরকার।

সর্বশেষ প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের তরফে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। সুষ্ঠু স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের মধ্যদিয়ে প্রকৃত ঘটনা ও প্রকৃত দোষীদের চেহারা উন্মোচন করার পাশাপাশি দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। যাতে এ ধরনের শাস্তির শিকার আর কেউ না হয়। আর যদি ওই পরীক্ষার্থী ও দু শিক্ষকের যোগসাজশে অনিয়মের বিষয়টি সত্যি প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রেও শাস্তির মেয়াদ বাড়ানোর সুপারিশ অমূলক হবে না। আর হলসুপারের ভুলেই যদি পরীক্ষার্থীদের শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে তাহলে বহিষ্কৃত পরীক্ষার্থীদের একটি বছর ফিরিয়ে দেবেন কে?