স্টাফ রিপোর্টার: খুনিরা মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা-লেখক অভিজিৎ রায়কে হত্যার পরিকল্পনা এক মাস আগেই করেছিলো। এমন কি তাকে এক বছরের বেশি সময় ধরে ফেসবুকের মাধ্যমে অব্যাহতভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলো। আর এ খুনের অন্যতম নায়ক ইসলামপন্থি নামধারী উগ্র মতাদর্শের দু ব্লগার। এদের একজন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রেদোয়ানুল ইসলাম রানা ও অপরজন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরির নেতা ফারাবী সাইফুর রহমান। এদের সার্বিক পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে তদন্তসংশ্লিষ্টরা একরকম নিশ্চিত। অপরদিকে বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যার তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই’র সহায়তা নেবে সরকার। গতকাল রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী প্রভাবশালী পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্টদূতদের সাথে বৈঠকে একথা জানান।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, অন্তত এক বছর আগে অভিজিৎকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অভিজিৎ ও তার পরিবারের সদস্যদের অবস্থানসহ নাম-ঠিকানা বিস্তারিত সংগ্রহ করছিলো সন্দেহভাজন খুনিরা। একই সাথে অভিজিতের দেশে ফেরার অপেক্ষায় ছিলো তারা। বইমেলা উপলক্ষে কবে অভিজিৎ সস্ত্রীক ঢাকা আসছেন সে খবরও তারা সংগ্রহ করেছিলো। আর ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসার পর থেকে খুনিরা হত্যা মিশন নিরাপদে সফল করতে সব চেষ্টা চালিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চরম ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে বৃহস্পতিবার যার করুণ পরিসমাপ্তি ঘটে।
যেভাবে হত্যার হুমকি দেয়া হয়: খুনিচক্রের অন্যমত ফারাবী সাইফুর রহমানের ফেসবুক স্ট্যাটাসে অভিজিৎকে হত্যার প্রত্যক্ষ হুমকি দেয়ার প্রমাণ রয়েছে। এতে দেখা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি অভিজিৎকে হত্যার পর অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফারাবীর ফেসবুকে অভিজিতের রক্তাক্ত লাশের একটি ছবি পোস্ট করে জানতে চান, ‘ছবি পাইছেন কি? কি রকম অনুভূতি হচ্ছে আপনার? জবাবে ফারাবী বলেন, হ্যাঁ (ছবি পেয়েছি)। আমি গ্রেফতার হবো কাল-পরশুর মাঝে।’ এদিকে জানা গেছে, লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ হত্যা তদন্তে এফবিআইয়ের সহায়তা নেবে সরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী রোববার বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফিংকালে সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন।
অপরদিকে অভিজিৎ খুন হওয়ায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, এ হত্যার মোটিভ জানতে এবং হত্যার নেপথ্যে থাকা প্রকৃত খুনিদের খুঁজে বের করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এফবিআইকে এতে যুক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবে বাংলাদেশ সরকার ইতিবাচক সাড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।