মামলার ধার্যদিন ৪ মার্চ নিয়ে জল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির দু মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের কথা রয়েছে ৪ মার্চ। ফলে এ দিনটি নিয়ে নতুন করে কৌতুহলের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুরান ঢাকার বকশিবাজারে আলিয়া মাদরাসা মাঠে বিশেষ জজ আদালতে তিনি যাবেন কি যাবেন না, তা অবশ্য দলীয় নেতাকর্মীদের তেমন কেউ নিশ্চিত করতে পারেননি। অপরদিকে তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এ অবস্থায় নেতাকর্মীদের থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী ৫৭ দিন ধরে গুলশান কার্যালয়েই অবস্থান করছেন।

খালেদা জিয়া আত্মসমর্পণ করবেন, নাকি গ্রেফতার করা হবে- বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ভেতরে-বাইরেও এ নিয়ে আলোচনার অন্ত নেই। ৪ মার্চের এ ডেটলাইন নিয়ে আলোচনা আছে সরকারি মহলেও।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও এ দিনটিকে বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখছে। সরকার পক্ষ মনে করছে, বিএনপি চেয়ারপারসন স্বেচ্ছায় ওইদিন আদালতে যাবেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে তিনি আদালতে জামিন চাইবেন। যদি তা না করে গুলশান কার্যালয়েই অবস্থান করেন, তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সিদ্ধান্ত নেবে। এক্ষেত্রে কার্যালয় থেকে বেগম জিয়াকে বাসায় পাঠিয়ে দেয়ার চিন্তাভাবনাও চলছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটি সূত্রে জানা গেছে, আদালতে যাওয়ার প্রশ্নে দলের ভেতরে নানা আলোচনা আছে। তবে খালেদা জিয়ার মনোভাব অত্যন্ত শক্ত। তিনি বলেছেন, মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে মামলা করা হয়েছে। হয়রানি করার জন্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এ মামলার আইনজীবী বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, চেয়ারপারসন জামিন নিতে আদালতে যাবেন কি-না, তার কৌশল নির্ধারণে আমরা আইনজীবীরা খুব শিগগিরই বৈঠক করবো। এর আগে তার আদালতে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে পরিবেশ পরিস্থিতির আলোকেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সূত্র জানায়, ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর ওইদিন রাতেই বিচারপতি টিএইচ খানের বাসায় বৈঠকে এ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন বিএনপি সমর্থিত সিনিয়র আইনজীবীরা। গ্রেফতারি পরোয়ানা কিংবা খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের কী কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়। বৈঠকে সিনিয়র এক আইনজীবী অভিমত ব্যক্ত করেন, সরকার যদি বেগম জিয়াকে গ্রেফতারই করে, তাহলে গুলশান কার্যালয়কেই যেন সাব-জেল হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বিএনপি প্রধানের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় তার এ অভিমতের সাথে সবাই একমত পোষণ করেন। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেন, গুলশান কার্যালয়ে তালা ঝোলানো ছাড়াও সারাদেশে ২০ দলের নেতাকর্মীদের মনোবল ভেঙে দেয়ার জন্যই খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা সফরকালে ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাৎ বিঘ্নিত করারও উদ্দেশ্য থাকতে পারে।

সূত্রমতে, আন্দোলন প্রশ্নে অনড় অবস্থানে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যেকোনো পরিস্থিতিতেই গুলশান কার্যালয়ে থাকতে চান। তাই দুর্নীতির দু মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ার বিরুদ্ধে জামিন চাইতে আদালতে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। আদালতে জামিন চাইতে গেলে কার্যালয়ে ফিরতে না পারার আশঙ্কা বিএনপির নীতিনির্ধারকদের। দলের আরেকটি সূত্রের মতে, চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা বা পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে খালেদা জিয়াকে নানাভাবে চাপে রাখার কৌশল এটি। তাকে গুলশান কার্যালয়ের বাইরে নিতে পারলে সেখানে ফিরতে দেয়ার সম্ভাবনা নেই। ওই কার্যালয়ে তালা লাগিয়ে বাসায় যেতে বাধ্য করা হতে পারে। তবে একাধিক আইনজীবী এও বলছেন, দুটি মামলাই জামিনযোগ্য। সেক্ষেত্রে জামিন চাইতে আদালতে যেতেও পারেন বিএনপি প্রধান। অবশ্য নিশ্চিত কিছুই জানাতে পারেনি দায়িত্বশীল একসূত্র। তাদের মতে, আদালতে জামিন না নিলে একতরফাভাবে সাক্ষী নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে সাজা দেয়া হতে পারে। আর সরকার চাইলে কার্যালয় থেকেও বেগম জিয়াকে জোরপূর্বক বাসায় পাঠিয়ে দিতে পারে। তাই সার্বিক বিষয় নিয়ে দু মামলার আইনজীবীরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার শুরু থেকেই চাচ্ছে, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় ছেড়ে যান। কয়েকজন মন্ত্রীও একাধিকবার এ বিষয়ে হুমকিধমকিও দিয়েছেন। গুলশান কার্যালয়ে থেকেই তিনি প্রায় দু মাস ধরে সারাদেশে আন্দোলন পরিচালনা করছেন।