পেট্রোলবোমায় দগ্ধ আরও দুজনের মৃত্যু

হবিগঞ্জে ট্রেনে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপে দগ্ধ মা-মেয়েসহ ৩

 

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) বার্ন ইউনিটে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। প্রায় প্রতিদিনই দগ্ধ রোগী ভর্তি হচ্ছেন। এদিকে শনিবার ভোরে ও বিকালে আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে সুস্থ হয়ে উঠা একজনকে ছুটি দিতে না দিতেই নতুন করে আরও ২ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছেন। দগ্ধরা দিন-রাত ছটফট করছেন। এ নিয়ে ৫ জানুয়ারি থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে গতরাত হবিগঞ্জের মাধবপুরে সিলেটগামী পাহাড়িকা একপ্রেস ট্রেনে পেট্রোলবোমা হামলায় মা-মেয়েসহ তিনযাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার নোয়াপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দগ্ধরা হলেন- মাধবপুর উপজেলার হরষপুর গ্রামের মোহন রুদ্রের ছেলে মাধব রুদ্র (৩০), হবিগঞ্জ সদর উপজেলার এড়ালিয়া গ্রামের কেসলি মিয়ার স্ত্রী মায়া বেগম (৪৫) ও তার মেয়ে আমেনা বেগম (২২)। তাদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

গত শুক্রবার রাতে নতুন করে আরও ৫ জন বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন। যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ৫১ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি রয়েছেন। ৭ জনকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। যাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ৩১ জন রয়েছেন যাদের শরীর পেট্রলবোমায় ২০ শতাংশ থেকে ৮৪ শতাংশ পুড়ে গেছে। শ্বাসনালি পোড়া অবস্থায় ভর্তি রয়েছেন ২৩ জন।

শনিবার বিকেল ৪টা ৭ মিনিটে হেলপার শাকিলের মৃত্যু হয়। শাকিল (১৬) ২৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের রূপগঞ্জে বাসে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হন। তার সাথে ওই বাসের অপর একজন হেলপার শিশু ইয়াসিনও দগ্ধ হয়। পেট্রলবোমায় শাকিলের ৬৭ শতাংশ শরীর পুড়ে গিয়েছিল। শিশু ইয়াসিনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে শাকিলের লাশের পাশে দাঁড়িয়ে বিলাপ করছিলেন দাদি জরুহা বেগম। জানালেন, শাকিলের যখন ১ বছর তখন তার মা শিল্পী বেগম শাকিলকে রেখে অন্যত্র চলে যায়। তারপর আর কোনোদিন শিল্পী তার সন্তান শাকিলকে দেখতে আসেনি। তার বাবা জসিম উদ্দিনও শাকিলের খোঁজ খবর নেয়নি। নাতিকে তিনিই বড় করেছেন। তার সঙ্গে থাকতেন। বিভিন্ন বাসে হেলপারের কাজ করে জীবন চালাতেন।

এদিকে শুক্রবার রূপগঞ্জে বাসে পেট্রোলবোমায় আহত কবির হোসেন শনিবার ভোররাতে ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। কবির হোসেনকে শুক্রবার রাতে বার্ন ইউনিটে আনা হলেও তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরে পেট্রোলবোমায় তেমন আগুন না লাগলেও মাথায় গুরুতর আঘাত পান। মাথার দু’পাশে পেট্রোলবোমার কাচের অংশ ঢুকে পড়েছিলো। এ বিষয়ে বার্ন ইউনিটের জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত ডা. অধ্যাপক পার্থশংকর দাস বলেন, কবির হোসেনকে প্রথমে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। শুক্রবার মধ্যরাতে তাকে ঢামেক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। তার মৃত্যু বার্ন ইউনিটে হয়নি, এ পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে নতুন করে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টায় পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে ৬ জন ভর্তি হয় ঢামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে। এদের মধ্যে ২ জনকে শনিবার দুপুরে চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। বাকি ৪ জন মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। শুক্রবার ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-রূপগঞ্জ এলাকায় রাত ১০টার দিকে ট্রাকে পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হন ওই ৬ জন।

ওই ৬ জনের মধ্যে ৪৬ শতাংশ পোড়া শরীর নিয়ে দিনমজুর হেলাল মিয়া ছটফট করছেন। শনিবার সকালে ঢামেক হাসপাতাল বার্ন ইউনিট সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, দগ্ধ হেলালের পাশে আহাজারি করছেন তারা স্ত্রী স্বপ্না বেগম। হেলালের দুই পা, দুই হাতসহ পুরো শরীর ও কোমর পুড়ে গেছে। পুড়ে গেছে শ্বাসনালিও।

স্বামীর কিছু হলে তিনি বাঁচবেন না জানিয়ে স্ত্রী স্বপ্না বেগম জানান, তাদের বিয়ে হয়েছে ৫ বছর। খুবই দরিদ্র তারা। জুরাইন এলাকায় একটি ঝুপড়ি ঘরে ভাড়া থাকেন। স্বামী দিনমজুরের কাজ করেন।

হেলালের সঙ্গে দগ্ধ হয়ে আসা দিনমজুর মো. বিল্লাল (২৪), সালাম (২৮) ও রাশেদ (২৯) মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। রাশেদের বৃদ্ধ মা জয়তুননেসা ছেলের পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছেন। কেউই তাকে সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না। তিনি বলেন, এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অনেকেই মরে যাচ্ছে। তার ছেলের ওই রকম কিছু হলে তিনি বাঁচবেন না। মা জয়তুননেসা জানালেন, রাশেদ তার একমাত্র ছেলে। মাটি কাটার কাজ করে। তার স্ত্রী শিল্পী আক্তার অসুস্থ। ২ মাসের একটি সন্তান রয়েছে তাদের সংসারে। ওই অবস্থায় স্বামীকে দেখতে আসতে পারছে না স্ত্রী।