চট্টগ্রামে বাসা থেকে বিপুল বিস্ফোরক গ্রেনেড-গুলি উদ্ধার

এগুলো দিয়ে সেনাবাহিনীর এক ব্যাটালিয়ন মোকাবেলা করা যায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: চট্টগ্রাম নগরীর প্রাণকেন্দ্র হালিশহর থানার গোল্ডেন কমপ্লেক্স আবাসিক এলাকায় আরো একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে ৱ্যাব। ১ নং রোডের ১/১৯ নং বাসায় গত শুক্রবার রাতে অভিযান শুরু হয়ে চলে গতকাল সকাল পর্যন্ত। অভিযানে উদ্ধার করা হয় ১৫০ কেজি শক্তিশালী বিস্ফোরক, আনুমানিক ৩০ প্রকারের বোমা তৈরির সরঞ্জাম, ৭৬টি শক্তিশালী তাজা বোমা (দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি গ্রেনেড), ২৪ রাউন্ড শটগানের গুলি, বিপুল পরিমাণ ব্যাটারি, বাল্ব, ইলেকট্রিক তার, বোমা বানানোর মাস্ক, গ্লাভস ইত্যাদি এবং প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ইউনিফর্মের সরঞ্জামাদি। অভিযানে এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এরা হলেন- মো. ফয়জুল হক, মো. আবদুল হাই ও রহিমা আক্তার।

এর আগে গত ১৯ ও ২১ ফেব্রুয়ারি জেলার হাটহাজারী ও বাঁশখালীতে দুটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের সন্ধান পায় ৱ্যাব। দুটি ক্যাম্প থেকে ১৭ জঙ্গিকে গ্রেফতার ও বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়। এ দুটি ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই বিস্ফোরকের এ বিপুল মজুদ উদ্ধার করা হলো। গতকাল অভিযান শেষে এক প্রেস ব্রিফিঙে ৱ্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, হালিশহরের বাসা থেকে যে বিপুল পরিমাণ গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে তা দিয়ে সেনাবাহিনীর একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাটালিয়নকে মোকাবেলা করা যায়। উদ্ধারকৃত সরঞ্জামাদির মধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক পুস্তক ও অনেক নথিপত্র রয়েছে। তিনি বলেন, দেশে জঙ্গিবাদ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা নিয়ে এরা সংগঠিত হচ্ছে। এ ধরনের একটি ব্যাপক আন্ডারগ্রাউন্ড কর্মযজ্ঞ চালাতে হলে বিশাল নেটওয়ার্ক দরকার হয়। দরকার হয় বিপুল অর্থের। যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের দেশীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক যোগসূত্র আছে কি-না তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, ৱ্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তত্পরতার কারণে দেশ ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।  অন্যথায় এ বিপুল বিস্ফোরক ও বোমা নাশকতায় ব্যবহার হলে ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা ছিলো।

বেনজীর আহমেদ আরো বলেন, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আমরা চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে একটি জঙ্গি গোষ্ঠীর সন্ধান পাই। তদন্ত এবং ফলোআপ হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি আমরা বাঁশখালীতে একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিং সেন্টার আবিষ্কার করি। সেখানে ভয়াবহ সব ট্রেনিং প্রদান করা হতো। ওই দুটি অপারেশনের ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার রাতে আমরা হালিশহরে অভিযান পরিচালনা করেছি।

তিনি বলেন, এটি একটি ভয়াবহ অপতত্পরতা ছিলো যেটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, ৱ্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কারণে আমরা আগে থেকেই ধরে ফেলতে পেরেছি। তাদের যেসব পরিকল্পনা ছিলো সেগুলো অত্যন্ত ভয়াবহ। তাদের পেছনে একটি বিশাল নেটওয়ার্ক জড়িত। এ নেটওয়ার্কটাকে আমরা সম্পূর্ণভাবে ছেঁকে তুলে আনতে চাই। দেশের ও মানুষের নিরাপত্তা এবং দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ওদের নির্মূল করার বিকল্প নেই। এজন্য সব দেশপ্রেমিক নাগরিকের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতা পেতে চাই।

পানির ফ্লাক্সে বোমা: ৱ্যাব মহাপরিচালক আরো জানান, হালিশহরের ওই আস্তানা থেকে উদ্ধারকৃত সামগ্রীর মধ্যে অদ্ভূত সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন বাচ্চাদের পানির ফ্লাক্সকে ব্যবহার করা হয়েছে বোমার শেল বা খাপ হিসেবে। কেউ যদি ফ্লাক্স নিয়ে হেঁটে যায় তাহলে সাধারণ মানুষ মনে করবে এতে স্কুলের বাচ্চার পানি। কিন্তু আসলে এটি মারাত্মক প্রাণঘাতী একটি অস্ত্র যেটা মুহূর্তের মধ্যে শ শ লোকের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। এ ধরনের অনেক উদ্ভাবনী কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। বোমা তৈরির জন্য স্টিলের পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম জুড়ে শিকড় গাড়ছে শক্তিশালী জঙ্গি নেটওয়ার্ক। দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে জেলা ও নগরীর আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ছে তারা। এ তালিকায় নাম লেখাচ্ছে কিশোর-তরুণ থেকে শুরু করে নারীরাও। তারা ব্যবহার করছে অভিনব ও আধুনিক প্রযুক্তি। গত ৫ জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে ব্যাপক নাশকতা ও সহিংসতা শুরুর পরও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া চট্টগ্রাম ছিলো তুলনামূলক শান্ত। কিন্তু ৱ্যাবের অভিযানে একের পর এক জঙ্গি আস্তানা উদঘাটিত হওয়ায় এ অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।