১১ পরীক্ষার্থী বহিষ্কার : কক্ষ পরিদর্শক দু শিক্ষককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা

এসএসসি পরীক্ষায় আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ একাডেমী কেন্দ্রে অনিয়ম : ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত

খাসকররা বাজারে মোমবাতি জ্বালিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের প্রতিবাদ
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আসন বদল করে নিজেদের ইচ্ছেমতো বসার অপরাধে একটি কক্ষের ১১ জন পরীক্ষার্থীর সবাইকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দায়িত্ব অবহেলা ও অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতার দায়ে ওই কক্ষের পরিদর্শক দু শিক্ষককেও বহিষ্কার করা হয়। একই সাথে দু শিক্ষকের প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তবে তারা নগদ অর্থ দিয়ে জেলহাজত এড়ান। এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জ একাডেমী কেন্দ্রে গতকাল শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
সূত্রমতে, এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে শুক্রবার দুপুরে মুন্সিগঞ্জ একাডেমী পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০৬ নম্বর কক্ষে পরীক্ষার্থীরা আসন বদল করে পরীক্ষা দিচ্ছিলো। কক্ষ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ও রোমানা ইয়াসমিনের সহযোগিতায় অবৈধভাবে পরীক্ষা দেয়ার বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। খবর পেয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলমের নির্দেশে অভিযুক্তদের আটক করে থানায় নেয়া হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা খানম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কক্ষ পরিদর্শক দু শিক্ষককে তিরস্কারসহ ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দু মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেন এবং শিক্ষার্থীদেরকে বহিষ্কারের আদেশ দেন।
এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওই সিদ্ধান্তকে অবৈধ দাবি করে বহিষ্কৃত ১১ শিক্ষার্থীসহ দু শতাধিক গ্রামবাসী অভিভাবক মানববন্ধন করে। তারা আলমডাঙ্গার খাসকররা বাজারে শতাধিক মোমবাতি জ্বালিয়ে বহিষ্কৃতদের পরীক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেয়ার দাবি করেন। এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের রায়কে অবৈধ দাবি করে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী মানববন্ধন করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে স্থানীয় সচেতন মহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহিষ্কৃত ১১ শিক্ষার্থীর মধ্যে সাতজনই খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র। এছাড়া সপ্তগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ জন এবং বটিয়াপাড়া-মিয়ালমারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১ জন অনিয়মিত (ক্যাজুয়াল) পরিক্ষার্থী ছিলো। গতকাল বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়, পদার্থ বিজ্ঞান, ফিনান্স ও ব্যাংকিং পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী মো. শোভন আলী জানায়, কক্ষে পরীক্ষার্থীর তুলানায় কম প্রশ্নপত্র সরবরাহ করার কারণে সমস্যা দেখা দেয়। এক প্রশ্নপত্রে দুজনকে পরীক্ষা দেয়ার সুবিধার জন্যই ওই কক্ষে দায়িত্বরত শিক্ষকরাই পরীক্ষার্থীদের এক আসন থেকে অন্য আসনে বসান। বহিষ্কৃতদের দাবি, তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছায় আসন বদল করেনি। খাসকররা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম সিদ্দিক বহিষ্কৃতদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে অভিযোগ করেন, কেন্দ্র চিব তাইজাল হোসেন, সহকেন্দ্রসচিব মসিউর রহমান ও হলসুপার ফরিদুল ইসলাম বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কক্ষ পরিদর্শকের নাম কেটে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের দায়িত্ব দিয়ে পরীক্ষা পরিচালনা করে আসছেন। তিনি বলেন বিষয়টি খতিয়ে দেখলে আরো অনিয়ম দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে।
দণ্ডপ্রাপ্ত কক্ষ পরিদর্শক নাগদাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন এবং কাঁটাভাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রোমানা ইয়াসমিন জরিমানার অর্থ সাথে সাথে পরিশোধ করে মুচলেকা দিয়ে জেলহাজতে যাওয়ার হাত থেকে রেহাই পান।

Leave a comment