সহায়তা যেন ভুল হাতে না যায় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে

 

লাগাতার অবরোধ ও বিরতিযুক্ত হরতালের দু মাস পূর্ণ হতে চলেছে। বাস্তবে হরতাল-অবরোধের কোনো চিহ্ন না থাকলেও মাঝেমধ্যেই কিছু চোরাগোপ্তা হামলার ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে আছে যানবাহনে পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারা, ককটেল হামলা, রাতের অন্ধকারে রেললাইনের ফিশপ্লেট খুলে ফেলা, অফিস বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ এবং এমনই ধরনের নানা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড। এসব ঘটনায় এর মধ্যেই শতাধিক ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে, যার মধ্যে ৬০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে পেট্রোলবোমার আগুনে দগ্ধ হয়ে। আহত হয়েছে এক হাজারেরও বেশি মানুষ, যার মধ্যে অগ্নিদগ্ধের সংখ্যাই বেশি। তাদের কেউ বা চোখ হারিয়েছে, কেউ হাত-পা হারিয়েছে, আবার কারো কারো অবস্থা এমন যে জীবনে কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে কি-না, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

অন্যদিকে হতাহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাঁর অবর্তমানে পুরো পরিবারটির সামনে এখন কেবলই অন্ধকার। এ অবস্থায় দুর্ভাগ্যের শিকার এ পরিবারগুলোর সহায়তায় এগিয়ে এসেছে সরকার। এটা ঠিক, ভুল রাজনীতির নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে তারা যা হারিয়েছে, তার কোনো ক্ষতিপূরণ হয় না। তা সত্ত্বেও নিকটজনদের হারিয়ে যে দুঃসহ বিপজ্জনক অবস্থায় তারা পড়েছে, সেখানে সামান্য সহায়তারও মূল্য কম নয়। আমরা সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

একইভাবে এ সময়টাতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮ শতাধিক যানবাহন হরতাল-অবরোধ নামক রাজনীতির কঠিন হিংসার শিকার হয়েছে। বেশির ভাগ যানবাহনই পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। অথচ এমন অনেক পরিবার ছিলো, যাদের ভরণপোষণের প্রধান উপায় ছিলো ওই একটি বাস বা ট্রাক। সেই যানবাহনটি হারিয়ে তাদের অবস্থাও খুব করুণ হয়ে পড়েছে। সরকার ক্ষতিগ্রস্ত যানবাহনের তালিকা করে পর্যায়ক্রমে কিছুটা ক্ষতিপূরণ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর তেজগাঁও কার্যালয়ে প্রথম দফায় ক্ষতিগ্রস্ত ১৫৬টি গাড়ির ১৪৬ জন মালিকের হাতে চার কোটি ২০ লাখ ৬৫ হাজার টাকার চেক হস্তান্তর করেছেন। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি প্রতি সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দেয়া হয়েছে। তা ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির দামের সমান হয়তো নয়, তবু ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা সামান্য হলেও সান্ত্বনা খুঁজে পাবেন।

হরতাল-অবরোধের নামে চলা সহিংসতায় আরো অনেকেই অনেকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফুটপাতের হকার বা ক্ষুদ্র অনেক ব্যবসায়ী ইতোমধ্যেই পুঁজিপাট্টা হারিয়েছেন। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় কিংবা উৎপাদিত পণ্য বিক্রি বা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করতে না পারায় অনেক বড় ব্যবসায়ীও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের অগণিত কৃষকও। সবার ক্ষতি পূরণ করা হয়তো সম্ভব হবে না। তবু যতোটা পারা যায় সবার প্রতিই সরকারের সহানুভূতি থাকা প্রয়োজন। সেই সাথে সহায়তা যাতে কোনো ক্রমেই ভুল খাতে কিংবা ভুল হাতে চলে না যায় সেদিকেও কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে।