১০ বছর পর মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন আগামীকাল

মেহেরপুর অফিস: দীর্ঘ ১০ বছর পর আগামীকাল শনিবার মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হতে যাচ্ছে। সম্মেলনকে ঘিরে শহরের বিভিন্ন স্থানে তৈরি করা হচ্ছে তোরণ, সাঁটানো হচ্ছে রঙ বেরঙের ফেস্টুন। নেতাকর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে সাজসাজ রব। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নির্বাচনসহ বিভিন্ন কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তাই এবারের সম্মেলন থেকে নয়া নেতৃত্ব নির্বাচনের মাধ্যমে জেলা আওয়ামী লীগ আরো সুসংগঠিত হবে বলে জানান নেতৃবৃন্দ।

Meherpur Pic-1.

২০০৫ সালের ২০ জানুয়ারি মেহেরপুর মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রে প্রতি তিন বছর পরপর জেলা সম্মেলন করার কথা থকলেও দীর্ঘ ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ সম্মেলন। উপজেলাগুলোর অবস্থা একই। জেলার তিনটি উপজেলার মুজিবনগর ও সদর উপজেলা কাউন্সিল সদ্য সম্পন্ন হয়েছে। জেলা সম্মেলনের পর গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

দীর্ঘদিন পর সম্মেলন অনুষ্ঠানের বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মিয়াজান আলী জানান, আওয়ামী লীগের ক্ষমতার দু মেয়াদের মধ্যে বিভিন্ন নির্বাচন এবং বিরোধী জোটের আন্দোলন সংগ্রাম মোকাবেলায় নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকায় যথাসময়ে সম্মেলন করা সম্ভব হয়নি। তবে এতে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে কোনো প্রভাব পড়েনি। এবারের সম্মেলনের মধ্যদিয়ে দল আরো সুসংগঠিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সরকারের বর্তমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে স্থানীয় নেতাকর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে উল্লেখ করে মেহেরপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ফরহাদ হোসেন দোদুল বলেন, বিশ্বের দরবারে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছে বর্তমান সরকার। সম্মেলনের মধ্যদিয়ে যারা নেতৃত্বে আসবেন তারা সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এদিকে তৃণমূলসহ উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের অনেক নেতা মতামত প্রকাশ করে বলেন, দল ক্ষমতায় থাকলে সাংগঠনিক দিকে তেমন খেয়াল থাকে না। বিরোধীদলে থাকলে সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত থাকে। সম্মেলনও ঠিক সময়ে অনুষ্ঠিত হয়। তারপরও দীর্ঘদিন পর নেতাকর্মীদের প্রাণের দাবি পূরণ হতে যাওয়ায় খুশি তারা।

জেলা সম্মেলনের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হওয়ার লক্ষ্যে কেন্দ্রে লাবিংসহ জেলা কাউন্সিলরদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন অনেক নেতা। প্রার্থীরা ৯৯ জন কাউন্সিলরের কাছে ভোট প্রার্থনাও করছেন। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে বেশ কয়েকজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে।

সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ মো. গোলাম রসুল জানান, সিলেকশন নয়, ইলেকশনের মধ্যদিয়ে নেতা নির্বাচন করা গেলে যোগ্য নেতৃত্ব উঠে আসবে। মুজিবনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক আমাম হোসেন মিলু জানান, যাদেরকে জেলা কমিটির নেতা নির্বাচন করলে দল সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হবে এবং সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে তাদেরকেই নেতা হিসেবে দেখতে চাই।

গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহিদুজ্জামান খোকন জানান, বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলকে আরো সুসংগঠিত করতে হবে। সম্মেলনের মধ্যদিয়ে যেমন কর্মী সমর্থকরা চাঙ্গা হবেন তেমনি নতুন নেতৃত্বের নির্বাচনের মধ্যদিয়ে দেশের চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ড ত্বরান্বিত হবে।

তৃণমুল পর্যায়ের কয়েকজন নেতা মতামত প্রকাশ করে বলেন, যারা নেতাকর্মীদের সুখে দুঃখে পাশে থাকেন, রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে সময় ব্যয় করেন তাদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হবে।

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি জেলা সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জেলা শহরের শহীদ ড.সামসুজ্জোহা পার্কে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। নির্বাচন করা হবে জেলা আওয়ামী লীগের নতুন নেতৃত্ব। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। প্রধান বক্তা যুগ্ম সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফসহ ডজনখানেক কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নাল আবেদীন জানান, সম্মেলন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন। নেতাকর্মীদের সমাগম এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের বরণ করতে প্রস্তুত জেলা আওয়ামী লীগ। সুষ্ঠু সুন্দরভাবে সম্মেলন সম্পন্ন করার আশা প্রকাশ করলেন তিনি।

Leave a comment