খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত

স্টাফ রিপোর্টার: নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। কোনো পরিস্থিতিতেই কর্মসূচি থেকে পিছু হটার চিন্তা করছে না তারা। জোটনেত্রী খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। এদিকে পরোয়ানা জারির পর গ্রেফতার হতে প্রস্তুত বিএনপি চেয়ারপারসন। তাকে গ্রেফতার করা হলেও কোনো চাপের কাছে মাথা নত করবে না এমন বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। চেয়ারপারসনকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলনের কৌশল কি হতে পারে তা নিয়ে এরই মধ্যে চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলন চূড়ান্ত গতি পাবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

এদিকে সঙ্কট নিরসনে সরকার সহজেই সংলাপের উদ্যোগ নেবে বলে মনে করছেন না বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দেশি-বিদেশি চাপকেও তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন না। উল্টো আন্দোলন দমনে সরকার নতুন নতুন কৌশল গ্রহণ করছে। গণহারে গ্রেফতার, কথিত বন্দুকযুদ্ধের পর এবার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। সরকারের এমন উদ্যোগকে আন্দোলন দমনে মানসিক চাপ হিসেবে দেখছেন তারা। চাপ মোকাবেলা করে সরকারকে উল্টো চাপে রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। আন্দোলন আরও জোরালো করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মার্চের শুরু থেকে অবরোধ, হরতালের সাথে বিক্ষোভ মিছিল করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। উদ্দেশ্য, যেকোনো মূল্যে নেতাকর্মীদের রাজপথে নামানো। আপাতত ঢাকাসহ দেশের প্রত্যেকটি মহানগরের ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে ঝটিকা ছিল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এসব মিছিলে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মিছিলে নেতাকর্মীদের সংখ্যা বাড়তে থাকলে ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে বড় ধরনের শোডাউনের চিন্তাভাবনাও রয়েছে তাদের। জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বৃহস্পতিবার বলেন, বারবার সরকারকে আলোচনায় বসার আহ্বান জানানোর পরও তারা পাত্তাই দিচ্ছে না। দেশের বিশিষ্টজনের পাশাপাশি বিদেশী বন্ধু রাষ্ট্রও সঙ্কট নিরসনে সংলাপের উদ্যোগ নিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু কারও আহ্বানকেই তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। আলোচনায় না বসে সরকার দমন-পীড়নের মাধ্যমে আন্দোলনকে থামানোর কৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে গ্রেফতারের ষড়যন্ত্র করছে।

তিনি আরও বলেন, এসব করে আন্দোলন থামানো যাবে না। বরং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। আন্দোলন যে পর্যায়ে এসেছে সেখান থেকে সরে আসার কোনো অবস্থা নেই। তাই সঙ্কট নিরসনে সরকার সংলাপের উদ্যোগ নেবে বলে আশা করেন বিএনপির এই নীতিনির্ধারক।

সূত্র জানায়, দলের একটি অংশ মনে করছে শিগগিরই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে আন্দোলন চালিয়ে নেয়ার কৌশল কি হবে বা কে নেতৃত্ব দেবেন সে বিষয়ে দলের সব পর্যায়ে একটা মেসেজ দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে দলের সিনিয়র নেতা হিসেবে স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বা ড. আর গনিকে আপদকালীন দায়িত্ব দেয়ার পক্ষে অনেকে। আন্দোলনের নেপথ্যে যেসব নেতা রয়েছেন তাদের সাথে সমন্বয় করে কর্মসূচি অব্যাহত রাখা হবে। আর সার্বিক বিষয়ে এদের পরামর্শ দেবেন দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

সূত্র জানায়, খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে কিভাবে কারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন সে রূপরেখা আগেই তৈরি করা হয়েছে। দলের নীতিনির্ধারকসহ তৃণমূলের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার কাছে এমন বার্তাও পাঠানো হয়েছে। গ্রেফতার হলে শেষ মুহূর্তে দলের এসব পরিকল্পনার কথা জানাতে পারেন তিনি।

তবে দলটির বড় একটি অংশ মনে করে, সরকার যতোই প্রক্রিয়া করুক শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করবে না। মানসিক চাপ সৃষ্টি করতেই এসব কৌশল নেয়া হয়েছে। সরকারের এ কৌশল মোকাবেলা করে কীভাবে আন্দোলন সফল পরিণতির দিকে নেয়া যায় সেদিকেই নজর দেয়া উচিত। তবে শেষ পর্যন্ত খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে আন্দোলনের পালে নতুন হাওয়া যোগ হতে পারে। নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ আরও দানা বাঁধবে। সাধারণ মানুষও বিষয়টিকে ভালোভাবে নেবে না। সরকারের ওপর বিদেশি চাপও বাড়বে। সবকিছু মিলে খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হলে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখতে চায় দলের নেতারা।

সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলন থেকে কোনো কিছু অর্জন করা ছাড়া পিছু হটার চিন্তাভাবনা হাইকমান্ড থেকে তৃণমূল পর্যন্ত কোনো পর্যায়ে নেই। এ অবস্থা থেকে পিছু হটলে ভবিষ্যতে তাদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। কারণ কর্মসূচি চলমান থাকার পরও সরকার নানাভাবে নেতাকর্মীদের হয়রানি ও নির্যাতন করছে। গণগ্রেফতারের পাশাপাশি কথিত বন্দুকযুদ্ধে অসংখ্য নেতাকর্মীকে হত্যা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মসূচি স্থগিত বা শিথিল করা হলে সরকারের দমনের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে। কর্মসূচি চলার কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সেদিকে অনেকখানি ব্যস্ত। কর্মসূচি না থাকলে পুরো শক্তি নিয়ে তারা নেতাকর্মীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে।

সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সাথে কথা বলছেন। প্রায় সবাই আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে। নেতাকর্মীদের এমন মনোভাবের কারণে বিএনপির হাইকমান্ডও আন্দোলন থেকে সরে না এসে তা আরও বেগবান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সার্বিক মূল্যায়নে সরকারের নমনীয় হওয়ার লক্ষণ দেখছি না। সরকার আরও আক্রমণাত্মক হচ্ছে। গ্রেফতার প্রক্রিয়া শুধু অব্যাহত নেই, তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের খলনায়কে পরিণত করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।

তিনি জানান, এতকিছুর পরও তারা অধিকতর জোর গলায় সংলাপের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছেন। জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দেশের জনগণ তাদের ভূমিকা জোরদারে এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।