মাহমুদুর রহমান মান্না ১০ দিনের রিমান্ডে

স্টাফ রিপোর্টার: রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গুলশান থানায় দায়ের করা একটি মামলায় গতকাল বুধবার ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সম্প্রতি মান্নার সাথে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশের এক নাগরিকের টেলিফোনে আলাপ হয়। ওই আলাপে সরকার উত্খাতে নানা ষড়যন্ত্রসহ সেনাবাহিনীর জেনারেলদের সাথে মান্না বৈঠক করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এ কারণে তার বিরুদ্ধে সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনীতে বিদ্রোহের উসকানি ও প্ররোচনা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সাথে অপর একটি ফোনালাপের সূত্র ধরে মান্নার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলে হল দখল করাসহ সরকার উত্খাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত শনিবার ওই দুটি টেলিফোন আলাপের ঘটনায় গুলশান থানায় পুলিশ বাদী হয়ে ২টি জিডি করেছে। এদিকে রিমান্ড মঞ্জুর শেষে মান্নাকে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাজতে নেয়া হয়।

এ প্রসঙ্গে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, গুলশান থানা হাজতে মান্নাকে রাখতে অসুবিধা হওয়ায় তাকে ডিবির হাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই আবদুল বারিক। গত সোমবার রাত ৩টায় বনানীর ই ব্লকে ভাতিজি জামাইর বাসা থেকে মান্নাকে আটক করা হয়। পরিবারের সদস্যদের দাবি, ডিবি পরিচয়ে মান্নাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ঘটনার ২১ ঘণ্টা পর গত মঙ্গলবার রাত ১২টা ২৫ মিনিটে ৱ্যাব মান্নাকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে। তবে ৱ্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় ধানমণ্ডি সাত মসজিদ রোডের স্টার কাবাবের সামনে থেকে মান্নাকে তারা গ্রেফতার করে। ঘণ্টাখানেক পরে তাকে গুলশান থানায় সোপর্দ করা হয়।

কোর্ট রিপোর্টার জানান, মান্নাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দশ দিনের রিমান্ড চেয়ে পুলিশ আদালতে আবেদন করেন। আদালত দশ দিনই রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এ সময় আইনজীবীরা মান্নার জামিন চেয়ে আবেদন জানালে আদালত ওই আবেদন নাকচ করে দেন। রাষ্ট্রপক্ষে রিমান্ড শুনানি করেন ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু, অতিরিক্ত পিপি শাহ আলম তালুকদার ও প্রসিকিউশন পুলিশের সহকারী কমিশনার মিরাস উদ্দিন। শুনানিতে তারা বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্না নির্বাচিত একটি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাগণকে উত্সাহিত করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন।

অপরদিকে আইনজীবী আব্দুল মান্নান খান, সানাউল্লাহ মিয়া, মোহসীন মিয়া প্রমুখ রিমান্ড বাতিল ও মান্নার জামিন আবেদনের শুনানিতে বলেন, তার বক্তব্য বিকৃতভাবে প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করায় সরকার তার বিরুদ্ধে এ মিথ্যা আক্রোশমূলক মামলা করেছে।

আদালতে মান্না যা বললেন: উভয়পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি শেষে আদালতের অনুমতি নিয়ে বক্তব্য দেন মান্না। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে আদালতে বলেন, আমি আইনজীবী নই, তাই তাদের মতো করে কথা বলতে পারবো না। রাষ্ট্রপক্ষ রিমান্ড চেয়েছেন, যদি রিমান্ড চাওয়ার এ কারণে হয় যে মামলার তদন্তের স্বার্থে, তবে আমি বলবো, আমি ওইদিন অনেক মানুষের সাথে কথা বলেছি, শুধু ওই দুজনের সাথে নয়। আমি যে কথা বলেছি তা কাটাছেঁড়া করে প্রকাশ করা হয়েছে।’ মান্না বলেন, ‘পেট্রোলবোমার বিপক্ষে আমি কথা বলেছি। আমি বলেছি, গণতান্ত্রিক আন্দোলন হওয়া উচিত, নাশকতা হওয়া উচিত না। আমি যে কনভারসেশন করেছি তা লাইন টু লাইন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সামরিক বাহিনীর কারো সাথে আমার কোনো কথা হয়নি। কনভারসেশনে আমি বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক ছাত্র আন্দোলনের কথা। লাশ ফেলার কথা বলিনি। এ পর্যায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা মান্নার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান। শুরু হয় উভয়পক্ষের আইনজীবীদের বাগ-বিতণ্ডা। পরে বিচারকের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

মান্নার বিচার দাবি: মাহমুদুর রহমান মান্নার বিচার দাবি করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। গতকাল এক বিবৃতিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি বেনু কুমার দে ও সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী এ দাবি জানান। এছাড়া মান্নার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সনদ অবিলম্বে বাতিল করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে লজ্জা ও কলঙ্কমুক্ত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছে শিক্ষক সমিতি।