স্টাফ রিপোর্টার: অবশেষে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে গ্রেফতার বিষয় নিশ্চিত করেছে র্যাব। ইতোমধ্যে ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে গুলশান থানা একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত ১২টা ২০ মিনিটের দিকে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ককে থানায় নেয়ার পরপরই গোয়েন্দা কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তার আগ পর্যন্ত তাকে আটকের খবর অস্বীকার করে আসছিলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবশ্য র্যাবের কোনো বক্তব্য গণমাধ্যমে আসেনি। র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বলেন, পেনাল কোডের ১৩১ ধারায় গুলশান থানায় তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, এ ধারায় সশস্ত্র বাহিনীকে বিদ্রোহে উসকানির কথা বলা হয়েছে। মামলা নম্বর ৩২, তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি। গুলশান থানার এসআই সোহেল রানার করা এ মামলায় অজ্ঞাত আরও একজনকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয় এক ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে রোববার গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর তা নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে দেশজুড়ে। এর মধ্যেই মঙ্গলবার ভোররাতে মান্নাকে বনানীতে তার ভাইয়ের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। তখন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার নূর আলম বলেছেন, এ বিষয়ে তাদের কিছু জানা নেই।
গোয়েন্দা পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলামও বলেন, মাহমুদুর রহমান মান্নাকে আটক বা গ্রেফতার কোনোটাই করা হয়নি। তবে অন্য কোনো সংস্থা তাকে আটক করেছে কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ আটকের খবর অস্বীকার করার পর মান্নার পরিবারের পক্ষ থেকে দুপুরে বনানী থানায় একটি জিডি করা হয়। মান্নার বড় ভাইয়ের স্ত্রী বেগম সুলতানার করা ওই জিডিতে বলা হয়, নিজের কলাবাগানের বাসা থেকে মান্না বনানীর ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন। রাত ৩টা-সাড়ে ৩টার দিকে ৬-৭ জন লোক গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তার বনানীর বাসা থেকেই মান্নাকে নিয়ে যায়। রাত সাড়ে ৩টার দিকে শাদা পোশাকের ৫-৬ জন বাসার গেটে এসে নিজেদের গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয় দেয় এবং এখানেই মান্না আছে বলে জানান। এ সময় বাসার লোকজন সকাল না হওয়া পর্যন্ত দরজা খুলতে অস্বীকার করে। পরে তারা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দিলে দরজা খুলে দেয়া হয়। এরপরই ওই ব্যক্তিরা বাসায় ঢুকে মান্নাকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় বলে বেগম সুলতানা জানান। কিন্তু পরে পুলিশের অস্বীকারের খবর গণমাধ্যমে দেখে মান্নার সন্ধানে পুলিশের শরণ নেয়ার কথা জিডিতে উল্লেখ করেন বেগম সুলতানা। জিডির পর বনানী থানার ওসি ভূইয়া মাহবুব হাসান সাংবাদিকদের বলেন, মান্নার অবস্থান জানতে তারা সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন। মান্নাকে আটকের খবরে বিএনপির প্যাডে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ ক্ষোভ জানিয়ে অবিলম্বে তাকে পরিবারের কাছে ফেরত দিতে সরকারকে আহ্বান জানিয়েছিলেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, মান্না বিএনপির সাথে যোগসাজশ করে অসাংবিধানিক শক্তিকে ক্ষমতায় আনার ষড়যন্ত্র করছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানরত বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকা ও অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তির কথোপকথনের অডিও টেপে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মান্নাকে কথা বলতে শোনা যায়। এর মধ্যে খোকার সাথে আলাপে এক সময়কার ডাকসুর ভিপি মান্নাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে লাশ ফেলার কথা বলতে শোনা যায়। অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তির সাথে কথায় সেনা হস্তক্ষেপের বিষয়ে উদ্যোগী হতে তার আগ্রহের প্রকাশ ঘটে। খোকা ও অজ্ঞাত পরিচয় ওই ব্যক্তির সাথে এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা মান্নার কথোপকথনের অডিও ক্লিপের ভিত্তিতে রোববার গণমাধমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এদিকে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে মান্নার বিরুদ্ধে রাজধানীর শাহবাগ, রমনা ও পল্টন থানায় ছয়টি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে পুলিশ। শাহবাগার থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ খবর হলে থানার ওসি বা কোনো এসআই বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য নোট করা হলো উল্লেখ করে একটি জিডি করে থাকেন। তেমনি আজকে (সোমবার) মান্না, খোকা ও অজ্ঞাত ব্যক্তির কথোপকথনের খবরটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার ওসি সিরাজুল ইসলাম থানায় জিডি করে রেখেছেন।