ঝিনাইদহে দু যুবককে গুলি করে খুন : বিএনপি বলেছে নিহত দুজনই তাদের দলীয় কর্মী

পরিবারের দাবি চার দিন আগে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদেরকে অপহরণ করা হয় : পুলিশ বলেছে অন্য কথা

 

শাহনেওয়াজ খান সুমন: ঝিনাইদহে দু যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গত সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার ডেফোলবাড়িয়া গ্রামের মাঠ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বিএনপি বলেছে, নিহত দুজনই তাদের দলীয় কর্মী। অপরদিকে পুলিশ ও নিহতদের পরিবারের সদস্যদের বক্তব্যে অমিল পাওয়া গেছে।

নিহতরা হলো- ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চরখাজুরা গ্রামের নাসিম বিশ্বাসের ছেলে দেলোয়ার হোসেন দুলাল (২৫) ও পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ড কমিশনার বিএনপি নেতা গোলাম মোস্তফার ছেলে গোলাম আজম পলাশ (২৬)। এদিকে ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালিক দাবি করেছেন, নিহতরা বিএনপির কর্মী। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের ধড়পাকড়ের কারণে তারা পালিয়ে ছিলো। দুলাল ও পলাশ রাতে বাড়ি থাকতো না বলে তিনি জানান।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানান, এলাকার কৃষকরা সকালে মাঠে কাজ করতে যাওয়ার সময় দুটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ পুলিশ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালমর্গে পাঠায়।

নিহত দুলাল পেশায় কৃষক ও ইলেকট্রিক মিস্ত্রি এবং পলাশ একজন কৃষক বলে জানিয়েছে তাদের পরিবার। নিহত পলাশের চাচা নাজমুল হোসেন জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার বিকেলে পলাশ বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ ছিলো। রাতে আমরা জানতে পারি ওই দিন বিকেলে পলাশকে চুয়াডাঙ্গার দশমাইল এলাকা থেকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে দুটি মোটরসাইকেলযোগে শাদা পোশাকের লোকজন ধরে নিয়ে যায়। আটকের পর ডিবি পুলিশের হেফাজতে থাকাকালে পলাশের সাথে পরিবারের সদস্যদের মোবাইলফোনে কথা হয়েছে বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে তার মা মরিয়ম বেগম শুক্রবার সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

নিহত দুলালের ভাই আলাল বিশ্বাস বলেন, ১৮ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় ঝিনাইদহ শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড থেকে তার ভাইকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে শাদা পোশাকের লোকজন তুলে নিয়ে যায়। ডিবি পুলিশ আটকের পর থেকেই আমরা শুনতে পায় ভাইকে হাত-পা বেঁধে মারপিট করা হচ্ছে, খেতেও দেয়া হচ্ছে না। আটকের দিন রাত ১২টার দিকে ঝিনাইদহ ডিবি পুলিশ কার্যালয় থেকে দুলালের মোবাইলফোনে কথা হয়। সে জানায়, আমি ভালো আছি, কোনো সমস্যা নেই। তারপর থেকে দুলালের মোবাইলফোন বন্ধ হয়ে যায়। ভাইকে জীবিত ফেরত পাওয়ার জন্য ঝিনাইদহ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বার বার ধরনা দিই আমরা। সেখানে আমাদের মোবাইল নম্বর দিয়ে আসি। পরদিন সকালে মোবাইলফোনে ডিবি পুলিশের এক সদস্য আমাকে জানান, আপনারা টাকা-পয়সা নিয়ে বিকেল ৪টার সময় আমার সাথে দেখা করেন। কিন্তু তিনি নির্দিষ্ট কোনো টাকার কথা উল্লেখ করেননি। ওই পুলিশ সদস্য আমাকে আরও বলেন, যতো টাকা পারেন দ্রুত গুছিয়ে নিয়ে আসেন আপনার ভাইকে ছেড়ে দেয়া হবে। আমার ভাই বিএনপি করে বলে পুলিশে ধরে নিয়ে গিয়ে মেরেছে, তার নামে কোনো কেস নেই।

নিহত পলাশের বাবা গোলাম মোস্তফা জানান, তার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিলো না। ডিবি পুলিশ আটকের পাঁচ দিন পর সোমবার সকালে ডেফোলবাড়িয়া গ্রামের মাঠে তাদের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেলো। ডিবি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে জানানো হয়, তাকে তারা আটক করেনি।

ডিবি পুলিশ পলাশ ও দুলালকে আটকের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতরা ভালো মানুষ ছিলো না। প্রায় দু বছর আগে অস্ত্রসহ ধরা পড়ে তারা জেল খেটেছিলো। ঝিনাইদহের সহকারী পুলিশ সুপার গোপিনাথ কাঞ্জিলাল বলেন, কী কারণে তাদের হত্যা করা হয়েছে প্রাথমিকভাবে তা জানা যায়নি। ভোররাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করে দুর্বৃত্তরা লাশ মাঠে ফেলে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কে বা কারা এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। তবে নিহতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, পুলিশ তাদের আটক করেনি এটা আমরা নিশ্চিত হয়েছি।

এদিকে পুলিশের এক সূত্র নিশ্চিত করেছে, নিহত দুলাল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হুজির সাথে সম্পৃক্ত ছিলো এবং তার বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে দুটি বড় ধরনের মামলা হয়। আর পলাশ ছিলো দুলালের সহযোগী। জঙ্গি সংগঠনের অভ্যন্তরীণ কোনো ঘটনার জের ধরে দুলাল ও পলাশকে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।