চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মতিয়ার রহমান

জানাজায় মানুষের ঢল : বিভিন্ন মহলের শোক

 

ইসলাম রকিব: চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ৪ বারের নির্বাচিত চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পৌর কমিশনার মতিয়ার রহমান। গতকাল দুপুর ২টায় মরহুমের চিরচেনা জায়গা চুয়াডাঙ্গা টাউন ক্লাব ফুটবল মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। যে মাঠে কিশোর বয়সে একেসি ক্লাবের ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে খেলার জগতে হাতেখড়ি সেই মাঠেই নামাজে জানাজায় দলমত নির্বিশেষে মুসল্লির ঢল নামে।

নামাজে জানাজার শুরুতে চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন ও জেলা দোকান মালিক সমিতি পক্ষ থেকে সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার শোকবার্তা দিয়ে মরুহুমের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। জেলা দোকান মালিক সমিতির পক্ষে মরহুমের কফিনে ফুলেল শুভেচ্ছা প্রদান করেন জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আশাদুল হোসেন জোয়ার্দ্দার লেমন। মরহুমের ছোট ছেলে আশিকুর রহমান ল্যানজন তার পিতার পক্ষ থেকে উপস্থিত সকলের নিকট মাফ চেয়ে পিতার কোনো দায়-দেনা থাকলে তা পরিশোধ করার প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর চুয়াডাঙ্গা বড় মসজিদের খতিব মাওলানা বশির আহম্মেদ মরহুম মতিয়ার রহমানের নামাজে জানাজা পড়ান। জানাজা শেষে মরহুমের কফিন নিয়ে যাওয়া হয় চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে। সেখানে দাফন কার্যসম্পন্ন শেষে দোয়া কামনা করা হয়। দোয়া পরিচালনা করেন মাও. বশির আহম্মেদ। জানাজা ও দাফন কার্যে শরিক হন চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, বিএনপি নেতা আ. জব্বার সোনা, মজিবুল হক মালিক মজু, শহীদুল ইসলাম রতন, আশরাফুল ইসলাম মিন্টু, শরিফুল ইসলাম শরিফ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড. শরীফ উদ্দিন হাসু, অ্যাড. সেলিম উদ্দীন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল আলম ঝন্টু, নতুন ও সাবেক ফুটবলার, ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিবর্গ, মরহুমের আত্মীয়স্বজন। একই সাথে উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গ মরহুম মতিয়ার রহমানের আকস্মিক মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন। এছাড়া যারা শোক প্রকাশ করেছেন তারা হলেন- জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক দশম জাতীয় সংসদের হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা সোলায়মান হক জোয়ার্দ্দার ছেলুনের পক্ষে সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহসভাপতি রিয়াজুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার টোটন, জেলা শিল্প-বণিক সমিতির সভাপতি ইয়াকুব হোসেন মালিক, জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষে সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম লাড্ডু, জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সেলিনা খাতুন, জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আশাদুল হোসেন জোয়ার্দ্দার লেমন, সাধারণ সম্পাদক ইবরুল হাসান জোয়ার্দ্দার ইবু, জেলা পরিবেশক সমিতির সভাপতি তবিবুর রহমান জোয়ার্দ্দার বাবু, সাবেক সম্পাদক শহিদ হোসেন, শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের পক্ষে সভাপতি নইম হাসান জোয়ার্দ্দার, জেলা যুবলীগের পক্ষে আহ্বায়ক আরেফিন আলম রঞ্জু, জেলা ছাত্রলীগের পক্ষে মোহাইমেন হাসান জোয়ার্দ্দার অনিক, চুয়াডাঙ্গা নাইটিঙ্গেল ক্রিকেট একাডেমীর পক্ষে পরিচালক ইসলাম রকিব, প্রথম রাজধানী ফুটবল একাডেমীর পক্ষে সরোয়ার হোসেন মধু, শহিদুল কদর জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা শুভ সকাল ফুটবল ক্লাবের পক্ষে সভাপতি অধ্যক্ষ মাহাবুল ইসলাম সেলিম, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ওবাইদুর রহমান চৌধুরী জিপু, চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার কাঁচাবাজার দোকান মালিক সমিতির পক্ষে গিয়াস উদ্দিন বাচ্চু, সালাউদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

উল্লেখ্য, মতিয়ার রহমান মতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকার যাওয়ার পথে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি চুয়াডাঙ্গা একেসি ক্লাবের সাবেক কৃতী ফুটবলার। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ক্রীড়া সংগঠনের সাথে অতোপ্রতোভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা জেলা ফুটবল দল ও চুয়াডাঙ্গা শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রের ম্যানেজার হিসেবে নিজ দলকে একাধিকার জয়লাভ করিয়েছিলেন। সর্বশেষ ঝিনাইদহের কালিগঞ্জে অনুষ্ঠিত গোল্ডকাপ ফুটবলের শিরোপা জেতানোর পেছনো দলের ম্যানেজার কাম সমন্বয়ক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৯৩ সাল থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িক্ত পালন করেছিলেন। চুয়াডাঙ্গা রেলবাজার কাঁচা বাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমিতির আজীবন সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা পৌরসভা থেকে ৪ বার নির্বাচিত হয়েছিলেন কমিশনার পদে। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার অন্তরবর্তীকালীন চেয়ারম্যান, ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত কমিশনার, ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত কমিশনার ও ১৯৯৩ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। চুয়াডাঙ্গা নাইটিঙ্গেল ক্রিকেট একাডেমীর উপদেষ্টা ছাড়াও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্য নিবার্হী সদস্য ও জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মতিয়ার রহমানের এ মৃত্যু চুয়াডাঙ্গা ক্রীড়াঙ্গনের জন্য অপূরণীয় বলে মন্তব্য করেন চুয়াডাঙ্গার ক্রীড়মোদী ব্যক্তিরা।