দামুড়হুদায় প্রশ্নপত্র ফাঁস : দর্শনার সেলিম গ্রেফতার

চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটন : তদন্তে প্রকৃত দোষদের আড়াল করে প্রতিবদেন?

 

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস মামলার এজহারনামীয় আসামি দর্শনা ঘুঘুডাঙ্গার আজিজুলের ছেলে সেলিম ওরফে আল মিরাজকে (২০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই আবু জাহের ভূঁইয়া সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযান চালিয়ে তাকে দর্শনা এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন।

সেলিমকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় প্রকৃত দোষীদের নাম পরিচয়সহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উদঘাটিত হয়েছে বলে জানান মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। এদিকে গঠিত তদন্ত কমিটি প্রকৃত দোষীদের আড়াল করে দায়সারাভাবে তদন্ত শেষ করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগকারীরা বলেছেন, গত ১০ ডিসেম্বর দর্শনা পূর্ব রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরুরিসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সহকারী শিক্ষিকা হামিদা আরিফিন সীমাকে বদলি করা হয়। এ নিয়েও নানা গুঞ্জন উঠেছে।

উল্লেখ্য, গত ৬ ডিসেম্বর শনিবার একটি সঙ্ঘবদ্ধচক্র ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বার্ষিক পরীক্ষার (ইংরেজি ও গণিত) প্রশ্নপত্র ফাঁস করে। যা উপজেলার দর্শনার বিভিন্ন ফটোকপির দোকানে পাওয়া যায়। বিষয়টি জেলা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দার (এনএসআই) উপপরিচালক জাফর ইকবাল জেলার ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ইমেল করে জানান। পরে বিষয়টি ব্যাপক আকারে জানাজানি হয়ে পড়লে বিষয়টি তদন্তের জন্য দামুড়হুদা উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে পাঠান। অভিযোগ রয়েছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা জানার পরও একই প্রশ্নে পরীক্ষা নেয়া হয়। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ওইদিন সন্ধ্যায় গণিত পরীক্ষা স্থগিত করেন। পরদিন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ফরিদুর রহমানের পরামর্শে দামুড়হুদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ কুমার সাহাকে আহ্বায়ক এবং ইউআরসির ইন্সট্রাক্টর জামাল হোসেন ও সহকারী ইপজেলা শিক্ষা অফিসার হুমায়ন কবিরকে সদস্য করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গঠিত তদন্ত কমিটি দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ৩০ ডিসেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর দামুড়হুদা উপজেলা শিক্ষা অফিসার নূরজাহান বাদী হয়ে দর্শনার কাজি ফটোস্ট্যাটের মালিক আহাদ হোসেন ও ঘুঘুডাঙ্গার আজিজ কসাইয়ের ছেলে সেলিমকে আসামি করে গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিকেলে দামুড়হুদা মডেল থানায় পাবলিক পরীক্ষা (অপরাধ) আইনের ১৯৮০’র ৪ (ক) / ১৩ ধারায় মামলা দায়ের করেন।

মামলা দায়েরের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দামুড়হুদা মডেল থানার এসআই আবু জাহের ভূঁইয়া ঘটনা প্রকৃত রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামেন এবং গত বুধবার মামলার এজহারনামীয় আসামি দর্শনা ঘুঘুডাঙ্গার আজিজ কসাইয়ের ছেলে সেলিম ওরফে আল মিরাজকে (২০) গ্রেফতার করেন। গ্রেফতারের পর তার স্বীকারোক্তিতে বেবিয়ে পড়ে থলের বিড়াল। তিনি জানান, প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে গত ১০ ডিসেম্বর দর্শনা পূর্ব রামনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক জরুরি সভার আহ্বান করে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি। ওই সভায় রেবিয়ে আসে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সাথে জড়িতদের নাম পরিচয়। অতপর গত ৩০ ডিসেম্বর ওই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা হামিদা আরিফিন সীমাকে ঢাকা ধামরাই বদলি করা হয়। অবশ্য একটি সূত্র বলেছে শিক্ষিকা সীমা বদলির জন্য আগেই আবেদন করেছিলেন। তিনি আরো বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত মর্মে দর্শনা মাঠ পাড়ার খোদা বক্সের ছেলে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অনার্স পড়ুয়া ছাত্র সালাউদ্দিনসহ আরো কয়েকজনের নাম তদন্তে উঠে এসেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা।

Leave a comment