মানবতাবিরোধী অপরাধ : সুবহানের মৃত্যুদণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ দেন।

আব্দুস সুবহানের বিরুদ্ধে আনীত নয়টি অভিযোগের মধ্যে ছয়টি প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে ১, ৪ ও ৬ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসি, ২ ও ৭ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আমৃত্যু কারাদণ্ড এবং ৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ৫, ৮ ও ৯ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।

এর আগে রায় ঘোষণার জন্য সকালে আব্দুস সুবহানকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়। রায় ঘোষণায় ১৬৫ পৃষ্ঠার রায়ের সার-সংক্ষেপ পড়া হয়। গত বছরের ৪ ডিসেম্বর বিচারিক কার্যক্রম শেষে এ মামলার রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রাখা হয়। এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত দু ট্রাইব্যুনালে ১৫টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।

২০১৩ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর সুবহানের বিরুদ্ধে নয়টি অভিযোগ গঠনের মধ্যদিয়ে মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সুবহানের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৩১ জন সাক্ষ্য দেন। তবে আসামিপক্ষে কেউ সাফাই সাক্ষ্য দেননি। এর আগে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর পাবনার একটি ফৌজদারি মামলায় সুবহানকে বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল প্লাজা থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেফতার করে। ২৩ সেপ্টেম্বর তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক দেখানো হয়। ওই সময় থেকে তিনি কারাগারে আটক আছেন।

সুবহানের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগে বলা হয়, পাবনা সদরের সাবেক এ সংসদ সদস্য ১৯৩৬ সালে সুজানগর থানার মানিকহাটি ইউনিয়নের তৈলকুণ্ডি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পাকিস্তান আমলে তিনি ছিলেন পাবনা জেলা জামায়াতের আমির কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর তিনি পাবনা জেলা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি এবং পরে ভাইস-প্রেসিডেন্ট হন। তার নেতৃত্বে পাবনা জেলার বিভিন্ন থানায় শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠিত হয়।

সুবহানের বিরুদ্ধে ৯ অভিযোগ: সুবহানের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ হলো- ১৯৭১ সালের ১৭ থেকে ১৮ এপ্রিল সুবহান ও তার সহযোগীরা পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আশ্রয় নেয়া স্বাধীনতাকামী লোকদের অপহরণ করে হত্যা করেন।

দ্বিতীয় অভিযোগ হলো- একাত্তরের ১৩ এপ্রিল তার নেতৃত্বে ও উপস্থিতিতে স্বাধীনতা বিরোধীরা ঈশ্বরদী যুক্তিতলা গ্রামে অভিযান চালিয়ে লুটপাটসহ ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে হত্যাযজ্ঞ চালায়। তৃতীয় অভিযোগ হলো- ১৯৭১ সালের এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে ও ১৬ থেকে ১৯ মে ঈশ্বরদী অরণখোলা গ্রামে লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, দুই জনকে অপহরণ করে জেলা পরিষদ ডাক বাংলোয় নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

চতুর্থ অভিযোগে বলা হয়েছে- একাত্তরের ২ মে সুবহানের নেতৃত্বে পাকিস্তানি সেনারা ঈশ্বরদীর সাহাপুর গ্রামে অভিযান চালিয়ে অসংখ্য বাড়িঘরের মালামাল লুটপাট করে বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকজন লোককে হত্যা করে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, অগ্নিসংযোগ, অপহরণসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে।