বিদ্যালয়ের কোচিং ফি দিতে না পারায় অপদস্ত মা : ৮ম শ্রেণির ছাত্রের আত্মহত্যা

চুয়াডাঙ্গার সরোজগঞ্জ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম ৮ম ও ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ঢালাও কোচিং : ফি আদায়

 

স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সরোজগঞ্জের ৮ম শ্রেণির ছাত্র আল আমিন গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। বিদ্যালয়ের কোচিং ফি দিতে না পারায় মাকে কটূক্তি শোনার অপমান সহ্য করতে না পেরে অভিমানে সে গতপরশু রাতে বাড়ির পাশের একটি নিমগাছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। স্থানীয়রা এ তথ্য জানালেও বিদ্যালয়ের তরফে বলা হয়েছে, কটূক্তি করা হয়নি, পরশু মঙ্গলবার আল আমিনের মা বিদ্যালয়ে এসে আকুতি জানালে ৪শ টাকা ফি’র স্থলে ১শ টাকা নেয়া হয়।

জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের কুতুবপুর ইউনিয়নের হাসানহাটি পূর্বপাড়ার হতদরিদ্র মদিন মণ্ডলের একমাত্র পুত্রসন্তান আল আমিন সরোজগঞ্জ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণির ছাত্র ছিলো। আল আমিনের স্বপ্ন ছিলো লেখাপড়া শিখে পিতার অভাব ঘোচাবে। সেই স্বপ্ন বিদ্যালয়েরই কোচিং ফি’র চাপে কাঁচের মতো ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো। গতকাল সকালে আল আমিনের লাশ গাছ থেকে নামানোর সময় অনেকেই এ মন্তব্য করে বিদ্যালয়ের কোচিং নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে। একই সাথে বিরূপ সমালোচনায় উঠে আসে বিদ্যালয়ে কোচিং করানোর নীতিমালা।

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কেউ কেউ বলেছেন, সরোজগঞ্জ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৭ম, ৮ম ও ১০ম শ্রেণির সকল শিক্ষার্থীকে কোচিঙে বাধ্য করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে শিক্ষাদান আন্তরিকতার বদলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালার অজুহাতে কোচিং চালু করা হয়েছে। এ কোচিঙের ফি পরিশোধ করার জন্য দরিদ্র পিতার সন্তান আল আমিনের ওপর চাপ দেয়া হয়। আল আমিন তার মাকে বলে। গত মঙ্গলবার কিছু টাকা নিয়ে আল আমিনের মা ফুলছুরাতন বিদ্যালয়ে যান। শিক্ষক ইউসুফ আলীর নিকট পুরো ফি এক মোটে পরিশোধ করতে না পারার বিষয়টি জানিয়ে ছেলেকে লেখাপড়া করার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান। এতে ওই শিক্ষক কটূক্তি করেন। ফুলছুরাতন ১০০ টাকা দিয়ে বাড়ি ফেরেন। ওইদিন সন্ধ্যায় আল আমিন তার পিতা মদিন মণ্ডলের সাথে এ বিষয়ে কথা বলে। মদিন বলেন, লেখাপড়ার খরচ দেয়ার মতো সামর্থ নেই আমার। ওর চেয়ে লেখাপড়া বন্ধ করে দেয়াই ভালো। এতে আপত্তি তোলেন আল আমিনের মা ফুলছুরাতন নেছা। তিনি বলেন, যতো কষ্টই হোক ছেলেকে লেখাপড়া করাবো। কে কী বললো, কে অপমান করলো তা তোমাদের দেখতে হবে না। এ কথায় ক্ষুব্ধ হন মদিন মণ্ডল। ফুলছুরাতনের দিকে রুখে যান। ফুলছুরাতনকে ধাক্কাও দেন। বিষয়টি দেখে কিশোর আল আমিনের কষ্ট হয়। মাকে একবার বিদ্যালয়ে গিয়ে ফি দিতে না পারার কারণে কটূক্তি শোনা, অপদস্থ এবং বাড়িতে পিতারও চোখ রাঙানি দেখে অভিমানী হয়ে ওঠে সে। শেষ পর্যন্ত আল আমিন রাতে বাড়ির পাশের গাছের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। গতকাল সকালে লাশ দেখে স্থানীয়রা চমকে ওঠে।

৮ম শ্রেণির ছাত্র আল আমিনের আত্মহত্যার বিষয়ে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আকবর আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছাত্র আল আমিনের কোচিং ফি কমানোর জন্য ওর মা আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। গত মঙ্গলবার আমার সাথে দেখাও হয়নি। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষকের সাথে কথা বলে ১০০ টাকা দিয়ে গেছেন বলে জেনেছি। কটূক্তির অভিযোগ সঠিক নয়।

কতোজনকে কীভাবে কোচিং করানো হয়? এ প্রশ্নের জবাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, ৭ম, ৮ম ও ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হয়। ৪শ টাকা করে ফি নেয়া হয়। বিধিমালা আছে বলেই বিদ্যালয়ে কোচিং করানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। যে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা ফি দিতে পারে না তাদের ফি মাফও করা হয়। এর মাঝে আল আমিনের বিষয়টি ঠিক আমরা বুঝতে পারছি না। তবে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।