স্টাফ রিপোর্টার: শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস যথাযথ মর্যাদায় পালন উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। গত ৫ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত প্রস্তুতি সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার পক্ষে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক সমূহে বাংলা বর্ণমালা সংবলিত ফেস্টুন দ্বারা সজ্জিত, ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজ শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। সূর্যোদয়ের সাথে সকল সরকারি-বেসরকারি ভবনসমূহে অর্ধনমিত অবস্থায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করার জন্য স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান প্রধান ও ভবনের মালিকগণকে অবহিত করা হয়েছে। সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রভাতফেরি শুরু হয়ে শহীদ মিনারে আসতে হবে, প্রভাতফেরির পর শহীদ মিনারে প্রাঙ্গণে কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, সকাল ১০টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আয়োজনে ইসলামিক ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে হামদ-নাত ও কেরাত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে বলে সভায় জানানো হয়েছে।
২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা ও জেলা শিশু একাডেমীর আয়োজনে জেলা শিল্পকলা একাডেমী চত্বরে শিশুদের কবিতা আবৃত্তি, সঙ্গীত, চিত্রাঙ্কন ও সুন্দর হাতের লেখা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর সকল মসজিদে শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত, সুবিধামতো সময়ে সকল গির্জা, মন্দির ও প্যাগোডায় শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ প্রার্থনা ও সন্ধ্যা ৭টায় শিল্পকলা একাডেমী প্রাঙ্গণে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠুভাবে পালনের বিষয়টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।
আলোচনাসভায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে গৃহীত কর্মসূচিসমূহ পালনের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স অনুষ্ঠানস্থলসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েনের জন্য চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করা হয়েছে। জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদকে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযথ মর্যাদায় পালনের জন্য অনুরোধ জানানো হয়। এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে পত্র দিয়ে জানিয়ে দেবেন। স্কুল-কলেজ ও মাদরাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানগণকে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি গ্রহণ করে যথাযথ মর্যদায় পালনের জন্য বলা হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার/জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পত্র দিয়ে জানিয়ে দেবেন। জেলা তথ্য অফিসারকে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে গৃহীত কর্মসূচি ও ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উত্তোলনযোগ্য পতাকার সঠিক মাপ সম্পর্কিত তথ্য এবং পতাকা অমর্যাদাজনিত শাস্তির বিধান সম্পর্কে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা, ফুল ও ফুলের মালা, ফুলের স্তবক ইত্যাদি ক্ষতিসাধন না করা এবং মিনারের বেদী, ফুলের মালা/তোড়া দেয়ার সময় সৃষ্ট প্রতিযোগিতামূলক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করা ও শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষার্থে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার এবং চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এছাড়া চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে প্রয়োজনী সংখ্যক বিএনসিসি/রোভার স্কাউটস নিয়োগ দেয়ার জন্যেও জানানো হয়েছে। শহীদ মিনারে ফুলের তোড়া/ফুলের মালা প্রদানের পূর্বে ঘোষণা মঞ্চে সকল প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনকে নিবন্ধনভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়রকে অনুরোধ করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে শহীদ মিনার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, রঙ করা, বিদ্যুতের ব্যবস্থা ও শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষার বিষয়ে সকল প্রকার ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জানানো হয়। প্রয়োজনে তিনি চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার সহযোগিতা নেবেন। দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের জন্য চুয়াডাঙ্গা নেজারত ডেপুটি কালেক্টরকে জানানো হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালককে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনার বিষয়টি সমন্বয়ের জন্য এবং হামদ-নাত ও কেরাত প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদানের জন্য অবগত করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তাকে শিশুদের সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদানের জন্য বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের ন্যায় শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে জানানো হয়। যে সকল উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রয়েছে সে সকল উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণকে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যেও বলা হয়। চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধানকে বাংলা সাহিত্যে ‘ভাষা ও আন্দোলনের প্রভাব’ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখতে বলা হয়।