লঙ্কাকে হারিয়ে প্রতিশোধ নিউজিল্যান্ডের

মাথাভাঙ্গা মনিটর: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মধুর প্রতিশোধ নিয়ে বিশ্বকাপে শুভ সূচনা করেছে নিউজিল্যান্ড। বড় লক্ষ্য ছুড়ে দিয়ে গত দুবারের রানারআপদের সহজেই হারিয়েছে বিশ্বকাপের সহআয়োজকরা। কোরি অ্যান্ডারসন, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও কেন উইলিয়ামসনের অর্ধশতকে বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৩৩২ রানের লক্ষ্য দেয় নিউজিল্যান্ড। পরে বোলারদের দাপটে ৯৮ রানে ম্যাচটি জিতে নেয় তারা। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছেই হেরে বিদায় নিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। ১৯৯২ সালের আসরের পর থেকে এ দলটির কাছে অজেয় ছিলো শ্রীলঙ্কা। এবার জিততে নিজেদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হতো মাহেলা জয়াবর্ধনে-কুমার সাঙ্গাকারাদের দলটির। মাত্র সাতবার তিনশ রানের বড় লক্ষ্য তাড়ার কৃতিত্ব রয়েছে শ্রীলঙ্কার। ২০০৬ সালে লিডসে ২ উইকেটে ৩২৪ রান তাড়া তাদের সেরা। গতকাল শনিবার ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে ‘এ’ গ্রুপের খেলায় টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ৩৩১ রান করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৪৬ ওভার ১ বলে ২৩৩ রানে অলআউট হয়ে যায় শ্রীলঙ্কা।
তিলকারত্নে দিলশানের সাথে ৬৭ রানের জুটি গড়ে দলকে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন লাহিরু থিরিমান্নে। ফিরতি ক্যাচ নিয়ে দিলশানকে (২৪) বিদায় করে ১৩ ওভার স্থায়ী উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ড্যানিয়েল ভেটরি। দ্বিতীয় উইকেটে সাঙ্গাকারার সাথে ৫৭ রানের আরেকটি জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন থিরিমান্নে। তাকে বোল্ড করে ৯ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙেন ট্রেন্ট বোল্ট। সর্বোচ্চ ৬৫ রান করা থিরিমান্নের ৬০ বলের ইনিংসটি সাজানো ৮টি চারে। তার বিদায়ের পরই দিক হারায় শ্রীলঙ্কা। জয়াবর্ধনে ও সাঙ্গাকারার বিদায়ে বিপদে পড়ে দলটি।
ভেটরির বলে লুক রনকির গ্লাভসবন্দি হয়ে শূন্য রানে ফিরেন জয়াবর্ধনে। ৩৯ রান করে বোল্টের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে যান সাঙ্গাকারা। এ ইনিংস খেলার পথে রিকি পন্টিঙে পেছনে ফেলে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ও বিশ্বকাপে এক হাজার রানের কৃতিত্ব দেখান তিনি। দিমুথ করুনারত্নেকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস। কিন্তু জোড়া আঘাতে করুনারত্নে ও জিবন মেন্ডিসকে বিদায় করে নিউজিল্যান্ডকে সহজ জয়ের দিকে নিয়ে যান অ্যাডাম মিল্ন। ম্যাথিউস (৪৬) ছাড়া আর কেউ ভালো করতে না পারায় বড় হার এড়াতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। নিউজিল্যান্ডের অ্যান্ডারসন, ভেটরি, টিম সাউদি, মিল্ন ও বোল্ট দুটি করে উইকেট নেন। দিনের শুরু থেকেই আকাশ ছিলো পুরোপুরি মেঘে ঢাকা। আবহাওয়া পেস বোলিঙের অনুকূলেই ছিলো। কিন্তু সেই সুবিধা নিতে পারেননি শ্রীলঙ্কার পেসাররা। উৎসবমুখর পরিবেশে শুরু হয় বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ। মার্টিন গাপটিলের সঙ্গে ব্রেন্ডন ম্যাককালামের দারুণ উদ্বোধনী জুটি স্বাগতিক দর্শকদের আনন্দে মাতায়।
মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই কাভার দিয়ে চার হাঁকিয়ে অতিথিদের নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক জানিয়ে দেন, সামনে কী অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।। গাপটিলের (৪৯) সঙ্গে ১১১ রানের উদ্বোধনী জুটিতে নিউজিল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন ম্যাককালাম। রঙ্গনা হেরাথের বলে সীমানায় জিবন মেন্ডিসের হাতে তিনি ধরা পড়লে ভাঙে ১৫.৫ ওভার স্থায়ী জুটি। ৬৫ রান করা ম্যাককালামের ৪৯ বলের ইনিংটি ১০টি চার ও ১টি ছক্কায় গড়া। এর মধ্যে লাসিথ মালিঙ্গার করা অষ্টম ওভারে নেন ২২ রান। সেই ওভারে চারটি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান নিউজিল্যান্ডের অধিনায়ক। তৃতীয় উইকেটে রস টেইলরের সাথে ৫৭ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন দারুণ ছন্দে থাকা উইলিয়ামসন। তাদের ১১.১ ওভার স্থায়ী জুটি ভাঙ্গার কৃতিত্ব মেন্ডিসের। জোড়া আঘাতে এ দু ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন তিনি। ৬৫ বলে খেলা উইলিয়ামসনের ৫৭ রানের ইনিংসটি সাজানো ৫টি চার ও ১টি ছক্কায়। শেষ ১৯ ইনিংসে এ নিয়ে ১৩টিতে পঞ্চাশোর্ধ রান করলেন ২৪ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যান।
অবশ্য শূন্য রানেই ফিরে যেতে পারতেন উইলিয়ামসন। বিশ্বকাপের শুরুটা স্বপ্নের মতো হতে পারতো সুরঙ্গা লাকমালের। প্রথম বলেই উইকেট পেতে পারতেন তিনি। কিন্তু উইলিয়ামসনের ব্যাট ছুঁয়ে আসা ক্যাচটি গ্লাভসবন্দি করতে পারেননি সাঙ্গাকারা। ১৯৩ রানে প্রথম চার ব্যাটসম্যানের বিদায়ের পর দলকে সাড়ে তিনশ রানের দিকে নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব অ্যান্ডারসনের। গ্রান্ট এলিয়টের (২৯) সাথে ৬১ বলে ৬৫ রানের জুটি গড়ে জোড়া উইকেট হারানোর ধাক্কা সামাল দেন তিনি। এরপর রনকির সঙ্গে মাত্র ৩৭ বলে ৭৩ রানের আরেকটি দারুণ জুটি উপহার দেন অ্যান্ডারসন। শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৭৫ রান করেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৪৬ বলে খেলা তার ৭৫ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংসটি ৮টি চার ও ২টি ছক্কা সমৃদ্ধ। ৪৩ রানে লাকমালের বলে কাভারে মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান অ্যান্ডারসন।

Leave a comment