ভূমিষ্ঠ হয়েছে সবে। অতোটুকু শিশু। ওর মুখে বিষ দেবে কে? কেনই বা দিতে হবে? পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যেই যখন সুহৃদপূর্ণ সম্পর্ক তখন সদ্যজাত শিশুপুত্রের মুখে কেউ বিষ দিতে পারে, তা ভাবাও অবান্তর। অথচ ৬ দিনের শিশু মাহমুদের মুখে বিষের স্পষ্ট গন্ধ। শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অসুস্থ শিশুর উপসর্গ দেখে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছেন, শিশুর মুখে যে বিষ দেয়া হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ নেই। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন, অতোটুকু শিশুর মুখে বিষ দিলো কে? ঘটনার পর পরই গ্রামের এক ওঝাঁকে ডাকা হলে তিনি ‘হাত চালান’ দিয়ে জিনকে দোষারোপ করেছেন।
এই রায়সা গ্রামেই শিশু অপহরণের পর হত্যা শেষে জিনকে দোষারোপ করে পার পাওয়ার ইতিহাস রয়েছে। এই তো কয়েক বছর আগেই রায়সা বাজারপাড়ার এক শিশু অপহৃত হয়। কথিত ওঝাঁ জানায় ‘জিনে অপহরণ করেছে। লাশ ফেরত দেবে।’ দু দিনের মাথায় বাড়ির অদূরবর্তী স্থান থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার হয়। জিনে নয়, এটা হত্যাকাণ্ড। যে ওঝাঁ লাশ উদ্ধারের পূর্বেই জিনে অপহরণের পর হত্যা করেছে বলে জানিয়েছিলো, ওই শিশু হত্যার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সন্দেহের শীর্ষে রেখে সুষ্ঠু তদন্তের দাবিতে সোচ্চার হয় মাথাভাঙ্গা। দুর্ভাগ্য। আলমডাঙ্গা থানার তৎকালীন ওসি বোধকরি জিনে শিশু অপহরণ ও হত্যার বিষয়টি বিশ্বাস করেছিলেন বলেই তদন্ত আর গড়ায়নি। সেই ঘটনার পর আবারও একই গ্রামের বড়দাঁড়িপাড়ায় ঘটেছে রহস্যজনক ঘটনা। যে ঘটনাটিরও সুষ্ঠু তদন্তের দাবি রাখে। কারণ, জিনে কোনো শিশু যেমন অপহরণ করতে পারে না, পারে না হত্যা করতে, তেমনই অলৌকিক অদৃশ্যমান কোনো শক্তি শিশুর মুখে বিষ তুলে দিতে পারে না। কেউ না কেউ বিষ তুলে দিয়েছে। কথিত হাতচালান দিয়ে জিনের ওপর দোষ চাপানোটাও সন্দেহের বাতাবরণের কারণ।
হাতচালান কি বিশ্বাযোগ্য? এটা শুধু অনুমান নির্ভরই নয়, মানুষ ঠকানোর নাটক। হাত, বাটি বা চটা চালানের ফলাফল যদি কখনো মিলে যায় তা কাকতালীয়। কারণ হাতচালানোর নাটকের ফলাফল ১ ইস্টু ১। অর্থাৎ হতেও পারে নাও পারে। হবেই, এরকম বিশ্বাস যারা করে তাদেরকে কুসংস্কারাচ্ছন্ন বললে বোধকরি ভুল হয় না। তা ছাড়া জিনে কেন বারবার রায়সা গ্রামে শিশুদের ক্ষতি করবে? জিনের ক্ষমতা নিয়ে যারা চ্যালেঞ্জ করে তাদের কেন জিনে কিছু করতে পারে না? এতেই স্পষ্ট, জিন সেখানেই ক্ষতি করতে পারে যেখানে সচেতনতার প্রত্যাশিত আলো ছড়ায়নি। এ আলো ছড়াতে হবে।