বিশ্ব ভালোবাসা দিবস : বাড়তি প্রস্তুতি

ভালোবাসার দিন রোজ : আজ তাতে শান দেয়ার দিন

 

আলম আশরাফ/কামরুজ্জামান বেল্টু: ভালোবাসার দিন রোজ, আজ তাতে শান দেয়ার দিন। মনের উঠোনে আজ বসন্তের উতল হাওয়া। প্রাণে প্রাণে লাগবে সুখের দোলা, মুখ রেখে দখিনা বাতাসে চুপি চুপি বলার দিন ‘ভালোবাসি ভালোবাসি ও আমার প্রাণ পাখি ময়না, এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা যায় না..।’ আজ ভালোবাসা দিবস। আজ সেন্ট ভ্যালেন্টাইন’স ডে। রোমান বিশ্বাসে-বসন্তের আবিরে স্নানসূচি হয়ে আজ কিউপিড ‘প্রেমশর’ বাগিয়ে ঘুরে ফিরবে হৃদয় থেকে হৃদয়ে। অনুরাগ তাড়িত পরান এফোঁড়-ওফোঁড় হবে দেবতার বাঁকা ইশারায়। আজ হূদয় গহনে তারাপুঞ্জের মত ফুটবে চণ্ডিদাসের সেই অনাদিকালের সুর: দুঁহু তরে দুঁহু কাঁদে বিচ্ছেদ ভাবিয়া/ অর্ধতিল না দেখিলে যায় যে মরিয়া/সখি কেমনে বাঁধিব হিয়া…। আকুতি ঝরবে- ‘তুমি কি দেবে না সাড়া প্রিয়া বলে যদি ডাকি, হেসে কি কবে না কথা, হাত যদি হাতে রাখি।’

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশেই তরুণ-তরুণীদের মধ্যে উদ্দীপনায় কমতি থাকে না। বিগত দিনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে তাইতো এবারও ফুলের দোকানগুলোতে রাখা হচ্ছে তরতাজা গোলাপসহ নানা রঙের ফুল। কিছু নার্সারিগুলোতেও বাড়তি আয়োজন রয়েছে। এ দিবসে প্রেমিক-প্রেমিকার মনে লাগে অন্য রকম দোলা, ভালোবাসায় রাঙে হদয়।

এ কারণে ১৪ ফেব্রুয়ারি অধিকাংশ প্রেমিক-প্রেমিকাকে রিকশায় কিংবা অন্য কোনো বাহনে ঘুরে বেড়াতে চোখে পড়ে। ভালোবাসার দিনটিকে প্রেমিক-প্রেমিকারা উপভোগ করে নিজেদের মতো করেই। কখনো কখনো প্রশ্ন আসে ভালোবাসা দিবস কি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যই? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলে থাকেন না, ভালোবাসা কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয় নয়। এ দিবসে প্রেমিক-প্রেমিকার মনে লাগে অন্য রকম দোলা, ভালোবাসায় রাঙে হদয়।

এ কারণে ১৪ ফেব্রুয়ারি অধিকাংশ প্রেমিক-প্রেমিকাকে রিকশায় কিংবা অন্য কোনো বাহনে ঘুরে বেড়াতে চোখে পড়ে। ভালোবাসার দিনটিকে প্রেমিক-প্রেমিকারা উপভোগ করে নিজেদের মতো করেই। কখনো কখনো প্রশ্ন আসে ভালোবাসা দিবস কি শুধু প্রেমিক-প্রেমিকার জন্যই? এ প্রশ্নের উত্তরে অনেকেই বলে থাকেন না, ভালোবাসা কেবল প্রেমিক-প্রেমিকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকার বিষয় নয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের আত্মত্যাগ মূলত সিম্বলিক বা প্রতীকী। ভালোবাসা বলতে পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি পিতা-মাতার, বন্ধুর প্রতি বন্ধুর কিংবা স্বামী-স্ত্রীর নিজেদের প্রতি ভালোবাসা-শ্রদ্ধায় অবিচল থাকার শিক্ষা। এ শিক্ষা হৃদয়ে জাগ্রত করাই এ দিবসের মূল তাৎপর্য। তবে এখনও পর্যন্ত দিবসটি কেবল প্রেমিক-প্রেমিকা কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে যুগল জীবনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে। ভালোবাসা দিবসে তরুণ-তরুণীরা ফুল দিয়ে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানায়। শুভকামনা করে থাকে। প্রযুক্তির কল্যাণে ভালোবাসা জানানোর মধ্যেও এসেছে ভিন্নতা। কার্ডের প্রচলন অনেকটা উঠে গেছে এখন। একে অপরকে মোবাইলফোনে এসএমএস পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানায় তরুণ-তরুণীরা। অধিকাংশ তরুণের এখন রয়েছে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট। গতকাল থেকে সবার স্ট্যাটাসে দেখা গেছে, পরস্পরকে ভালোবাসা জানানোর ধুম পড়েছে অনলাইনে, ভাচ্যুয়াল জগতে।

গতকাল শুক্রবার ছিলো পয়লা ফাল্গুন, বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্যে ঋতুরাজ বসন্ত। গতকাল বসন্তের রঙে রঙিন হয়েছে পুরো দেশ। চুয়াডাঙ্গায় বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক সংগঠন পয়লা ফাল্গুনে আয়োজন করেছিলো নানা অনুষ্ঠানের। বর্ণিল সাজে তরুণ-তরুণীরা অংশ নিয়েছে বসন্ত উৎসবে। নেচে-গেয়ে, কবিতা আবৃত্তি করে বরণ করেছে তারা ঋতুরাজ বসন্তকে। চিরচেনা প্রাণের বসন্ত নতুন রঙ দিয়েছে সবার মনে। প্রকৃতি সেজেছে ভালোবাসার আবেশে। পাতায় পাতায় লেগেছে রঙ। দুলছে মধুর আরতি। এই তো সেই ক্ষণ ভালোবাসিবার। একদিন পরই এলো সেই ভালোবাসার দিনটি। প্রকৃতিতে যেমন বসন্ত এসেছে, তেমনি লাখো তরুণ-তরুণীর হৃদয়ে আজ বসন্তের ছোঁয়া দেবে ভালোবাসা। ভালোবাসাবাসি শুরুর করতে এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন অনেকেই। আজ তাদেরই দিন। নির্মলেন্দু গুণের মতো স্ট্রেটকাট বলে ফেলার দিন। পৃথিবীর সব সাহিত্য ডুবে আছে ভালোবাসা নিয়ে কাব্য-মহাকাব্য, গল্প, কবিতা, গান, উপন্যাসের অতলান্তে। তারপরও ভালোবাসা কী? এ প্রশ্নে খেই হারিয়েছেন রথি-মহারথিরাও। এ রকম অনির্ণীত রহস্যের জালে জীবনে কোনো না কোনো সময় সকলেই বাঁধা পড়ে, ভালোবাসাই মানুষকে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা দেয়, শক্তি যোগায়। আজ বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতা আর ভালোবাসার উৎসবে মুখর হবে দেশ। প্রেমিক-প্রেমিকার পদচারণা দেখা যাবে পথে-প্রান্তরে, পার্কে-রেস্টুরেন্টে। এবার ভালোবাসা দিবসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস জানা যাক।

প্রাচীন কিছু প্রথা থেকে দিবসটির সূত্রপাত। গ্রিক ও রোমান উপকথার মতোই ভালোবাসা দিবসের উৎপত্তি নিয়ে নানা গল্প-কাহিনি ছড়িয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি প্রচলিত তথ্যটি হলো- ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপন শুরু হয় রোমান সাম্রাজ্যের সময় থেকে। প্রাচীন রোমে ১৪ ফেব্রুয়ারি ছিলো রোমান দেবদেবীদের রাণী জুনোর সম্মানে পবিত্র দিন। রোমানরা তাকে নারী ও বিবাহের দেবী বলে বিশ্বাস করতো। দিনটি অনুসরণ করে পরের দিন ১৫ ফেব্রুয়ারি পালিত হতো লুপারকেলিয়া উৎসবের বিশেষ ভোজ। সে সময় তরুণ এবং তরুণীদের জীবনযাপন ব্যবসা ছিলো সম্পূর্ণ পৃথক। সম্রাট ক্লাডিয়াসের শাসনামলে রোম কয়েকটি জনবিরোধী এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। হিংস্র প্রকৃতির রাজা ক্লডিয়াস সে সময় তার সেনাবাহিনীতে যথেষ্ট সংখ্যক সৈন্য ভর্তি না হওয়া নিয়ে খুব কঠিন সময় পার করছিলেন। রোমান পুরুষদের তাদের পরিবার ও ভালোবাসা ত্যাগ করে যুদ্ধে না যাওয়াকে এর প্রধান কারণ হিসেবে দায়ী করছিলেন তিনি। ফলে ক্লাডিয়াস সমগ্র রোমে সব ধরনের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। সে সময় সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রোমের একজন ধর্মযাজক ছিলেন। তিনি এবং সেন্ট ম্যারিয়াস খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী তরুণ-তরুণীদের গোপনে বিয়ে দিতেন এবং বিবাহিত যুগলদের সহযোগিতা দিতেন। এ কারণে রোমের ম্যাজিস্ট্রেট তাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দি করেন। ভ্যালেন্টাইন বন্দি থাকা অবস্থায় অনেক তরুণ তাকে দেখতে যেত এবং কারাকক্ষের জানালা দিয়ে তার উদ্দেশে চিরকুট ও ফুল দিয়ে ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতা জানাতো। হাত নেড়ে তাকে জানাত যে, তারা যুদ্ধ নয়, ভালোবাসায় বিশ্বাসী। এদের মধ্যে একজন ছিলেন কারারক্ষীর মেয়ে। তার বাবা তাকে ভ্যালেন্টাইনের সাথে সাক্ষাৎ করতে এবং তার সাথে কথা বলতে সুযোগ করে দিত। মেয়েটি তাকে তার প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, ক্লাডিয়াসের নির্দেশ অমান্য করে তরুণ-তরুণীদের গোপনে বিয়ে দেয়া এবং ভালোবাসায় তার সমর্থনের কথা জানায়। এক সময় তারা একে অপরের বন্ধু হয়ে যায়। ভ্যালেন্টাইনের শিরচ্ছেদ করে হত্যার দিনে তিনি মেয়েটিকে তার বন্ধুত্ব এবং ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নিয়ে একটি চিরকুট লিখে রেখে যান। এতে তিনি লিখেছিলেন, লাভ ফ্রম ইউর ভ্যালেন্টাইন। বিচারকের নির্দেশ অনুসারে সেদিনই তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের এ আত্মত্যাগের দিনটি ছিলো ২৬৯ খ্রিস্টাব্দের ১৪ ফেব্রুয়ারি। এর একশ বছর পর ৩৬০ খ্রিস্টাব্দের দিকে প্রথম রোমে ভালোবাসা দিবস পালিত হয়। গত শতকে পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এ দিনটি ব্যাপকভাবে পালিত হয়।

১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশে দিবসটি ক্রমশ পরিচিত হতে থাকে। তার ঢেউ পড়েছে শহর থেকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনপদেও প্রেমিক-প্রেমিকাদের মধ্যে। পয়লা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে গত দু দিন ধরেই ফুলের দোকানগুলোতে বিভিন্ন ধরনের ফুল সাজিয়ে রাখতে দেখা গেছে। বেচাবিক্রিও হয়েছে দেদার। এছাড়াও স্পেশাল খাবার কেনারও তৎপরতা দেখা গেছে কোনো কোনো স্থানে। আজ প্রেমিক-প্রেমিকারা দিনটিকে নিজেদের মতো উদযাপন করতে প্রস্তুত। তবে কেবল প্রেমিক জুটি নয়, ভালোবাসার রঙ ছড়িয়ে পড়ুক পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে, বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে। শান্তি ও ভালোবাসার গান গেয়ে উঠুক মানবসভ্যতা।