সংঘাত নিরসনে কাউকে না কাউকে দায়িত্ব তো নিতেই হবে

 

চলমান সহিংস রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে ঢাকাসহ সারাদেশের ব্যবসায়ীরা রোববার একযোগে রাজপথে নেমে এসেছিলেন। তারা জাতীয় পতাকা ও বিভিন্ন স্লোগান সংবলিত প্লাকার্ড হাতে এ কর্মসূচি পালন করেন। এসব প্লাকার্ডে লেখা ছিল ‘দেশ বাঁচাও, অর্থনীতি বাঁচাও’, ‘সংঘাত নয়, সমাধান চাই’, ‘আইন করে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করো’ ইত্যাদি। তারা রাজনৈতিক সমস্যা রাজপথে টেনে না এনে তা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের পথ বের করার জন্য রাজনীতিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিছুদিন আগে ঢাকাতে পোশাক ও বস্ত্রশিল্প ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনীতিকে বাঁচাতে সহিংসতা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। তারাও রাজনীতির নামে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। ব্যবসায়ীদের এ আকুতির কারণ সহজেই বোধগম্য। দেশজুড়ে রাজনৈতিক সহিংসতা ও টানা হরতাল-অবরোধে ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে এরই মধ্যে বিভিন্ন খাত-উপখাতে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তুত একটি খাতে বিপর্যয় ঘটলে তার প্রভাব পড়ে অন্য খাতগুলোতে। সহিংস রাজনীতিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত আরেকটি খাত হল শিক্ষা। সব স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে কয়েক দফা পেছানোর পর শুক্রবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হলেও তা আবারও পড়েছে অনিশ্চয়তায়। মানুষ ও পণ্যের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সঞ্চালনের পথ ঝুঁকিপূর্ণ ও সীমিত হয়ে পড়েছে। তাই সরকার ও ২০ দলীয় জোট উভয়ের কাছে সঙ্কট সমাধানের পথ খোঁজার দাবি তোলা হচ্ছে দেশের প্রতিটি মহল তথা সর্বস্তরের জনগণের পক্ষ থেকে। এমনকি বিদেশিরাও জানাচ্ছেন একই আহ্বান। কিন্তু কে শোনে কার কথা! রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্য, বিবৃতি ও আচরণে দেখা যায় যতোই দিন যাচ্ছে, ততোই অনড় হয়ে উঠছে তাদের অবস্থান। দেশ ও জনগণের এতো ক্ষতির পরও তাদের মনোভাবে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ফলে তীব্রতর হচ্ছে সঙ্কট। এটা যত দীর্ঘায়িত হবে, ততোই দেশ ও জনগণের ক্ষতি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ‘বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?’ কে নেবে মধ্যস্থতার দায়িত্ব? কাউকে না কাউকে এ দায়িত্ব তো নিতেই হবে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষয়ক্ষতির চিত্র জানাতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করতে চান ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই নেতারা। সাক্ষাৎকালে তারা চলমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ নিয়েও আলোচনা করবেন। দেশের ব্যবসায়ী সমাজের মধ্যে যেমন সরকার সমর্থকরা রয়েছেন, তেমনি আছেন ২০ দলীয় জোটের সমর্থকরাও। সহিংস রাজনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উভয়েই। সবচেয়ে বড় কথা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও জনগণ। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবসায়ী নেতারা কি পারবেন বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধতে? আমরা আশা করবো, ব্যবসায়ীদের এ উদ্যোগের প্রতি ক্ষমতাসীন ও সরকারবিরোধী জোট উভয়েই সম্মান দেখাবে। অচলাবস্থা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। এ ব্যাপারে দু পক্ষের কাছেই মানুষ দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশা করছে।