স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা অবরোধের ৩৬তম দিন গেছে গতকাল মঙ্গলবার। এ অবরোধের পাশাপাশি রোববার থেকে ডাকা হরতালের তৃতীয় দিনে গতকাল রাতে ময়মনসিংহ শহরে সদর ভূমি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। ফেনীতে যাত্রীবাহী বাস ও নেত্রকোনায় ট্রাকে পেট্রোলবোমা হামলায় দগ্ধ হয়েছে অন্তত ১৩ জন। এছাড়া ভোলায় তেলবাহী লরি, ঝালকাঠিতে উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ি, পিরোজপুরে দুটি বাস, গাইবান্ধায় একটি ট্রাক ও নোয়াখালীতে একটি প্রাইভেট কার ও অটোরিকশায় আগুন দেওয়া হয়েছে।
ফেনী শহরের একটি পুলিশ ফাঁড়িতে ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন একজন পুলিশ সদস্য। রাজধানীতে একটি যাত্রীবাহী বাসে ককটেল হামলায় আহত হয়েছেন একজন পোশাক শ্রমিক। এর আগের সোমবার দিবাগত রাতে চট্টগ্রামের পটিয়ায় কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ের প্রধান ফটক ও দরজার তালায় সুপার গ্লু দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে সোমবার রাত থেকে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের ১০২ জনকে গ্রেপ্তার ও আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ময়মনসিংহে ভূমি কার্যালয়ে আগুন: গতকাল রাত সাড়ে ৯টার দিকে শহরের বাসাবাড়ি এলাকায় অবস্থিত ময়মনসিংহ সদর ভূমি কার্যালয়ের একটি কক্ষে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কার্যালয়ের পশ্চিম প্রান্তের একটি কক্ষের খোলা জানালা দিয়ে দুর্বৃত্তরা ভেতরে আগুন ছুড়ে দেয়। এতে ওই কক্ষের টেবিলে থাকা কয়েকটি খাতা পুড়ে গেছে। তবে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আগুন জ্বলতে দেখে পাশের মার্কেটের লোকজন এসে পানি দিয়ে নিভিয়ে ফেলে। পুলিশ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
যাত্রীবাহী বাস ও পাথরবাহী ট্রাকে পেট্রোলবোমা: ফেনীর দাগনভূঁঞায় একটি যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় ১১ যাত্রী দগ্ধ হয়েছে। এছাড়া নামতে গিয়ে আহত হয়েছে আরো প্রায় ২৫ যাত্রী। ফেনী থেকে ছেড়ে যাওয়া বসুরহাটগামী কবিরহাট এক্সপ্রেস নামের বাসটি দাগনভঁূঞার আমীরগাঁও পৌঁছলে দুর্বৃত্তরা হামলা চালায়। পেট্রলবোমায় বাসটিতে আগুন ধরে যায়। দগ্ধরা হলো মিলন, খোকন, বেলাল, মামুন, হোসাইন, মানিক, সোবহান, সবুজ, মাকসুদ, খোকন ও ছেমনা খাতুন। তাদের মধ্যে খোকন, সবুজ ও ছেমনা খাতুনকে গুরুতর দগ্ধ অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান। বাকিরা এখনো ফেনী ও দাগনভূঁঞার কয়েকটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
দাগনভূঞা থানার ওসি মো. আবুল ফয়সল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, পুলিশ আহতদের হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার বিরিশিরি এলাকায় সোমেশ্বরী সেতুর কাছে রাত ৯টার দিকে নুড়ি পাথরভর্তি একটি ট্রাকে পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে দুর্বৃত্তরা। এতে চালক আশরাফুল ইসলাম (৩৮) ও তাঁর সহকারী সোহাগ মিয়া (২৮) দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের প্রথমে দুর্গাপুর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাত ১০টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এমদাদুল হক খান জানান, সেতুর কাছে বিকল্প সড়কে পিসিনল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ঢোকার সময় ট্রাকটিকে লক্ষ করে হরতাল সমর্থকরা পেট্রলবোমা নিক্ষেপ করে। সঙ্গে সঙ্গে ট্রাকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশে পড়ে যায় এবং আগুন ধরে যাওয়ায় চালক ও তাঁর সহকারী দগ্ধ হন। তাঁদের মধ্যে আশরাফুলের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।