মানুষ পুড়িয়ে খালেদা জিয়া কী পেলেন?

স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এক মাসেরও বেশি সময় ধরে হরতাল-অবরোধের নামে পেট্রোলবোমা নিক্ষেপ করে পুড়িয়ে অর্ধশত মানুষের হত্যা ও অসংখ্য মানুষকে পঙ্গু করে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া কী পেলেন? এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করে বিএনপি-জামায়াত জোটের অর্জনটা কী? এগুলো করে যদি তারা মনে করেন, বিরাট কিছু করে ফেলেছেন তাহলে তা হবে জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তাদের মনে রাখতে হবে যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ক্ষমতায় যেতে হবে, নিরপরাধ জনগণের মৃতদেহের ওপর দিয়ে, সহিংসতা বা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করে নয়। বিএনপিকে গণতান্ত্রিক পথে ফিরে আসার আহ্বান জানান তিনি।

গতকাল সচিবালয়ে ধর্ম মন্ত্রণালয় পরিদর্শন ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় পরিদর্শন ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আনার উদ্দেশে নির্দেশনা দেয়ার লক্ষ্যে তার পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী গতকাল এ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যান।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এটা কোন ধরনের বিবেচনা, কী ধরনের কাজ তা আমি জানি না। আল্লাহ তাদের সুমতি দিক যেন তারা ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে সরে আসেন। তিনি বলেন, দশম সংসদ নির্বাচনে না গিয়ে বিএনপি নেত্রী ভুল করেছেন। এ ভুলের খেসারত জাতি কেন দেবে? খালেদা জিয়ার মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী বোধ হয় উম্মাদ। নইলে বাড়িঘর ছেড়ে অফিসে থেকে কোন বিপ্লব ঘটাচ্ছেন তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। তবে উনি যে ধরনের বিপ্লবের সূচনা প্রত্যাশা করেন না কেন, এটা সত্য যে, তিনি নরহত্যা করছেন এবং এমনকি শিশুদেরও জীবন্ত পুড়িয়ে মারছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন সবকিছু একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে এসেছি, ঠিক তখনই এ হরতাল-অবরোধের নামে মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। অবরোধের মধ্যে আবার হরতাল, অর্থাৎ মরার ওপর খাড়ার ঘা। বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে এসব করে যাচ্ছে। জানি না বিএনপি নেত্রীর কী উদ্দেশ্য। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যেও হরতাল ডাকার সমালোচনা করে খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া শিখুক, মানুষ হয়ে উঠুক, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হোক তা উনি চান না। লেখাপড়া শিখলে তো ভুল পথে পরিচালিত কিংবা বিভ্রান্ত করতে পারবে না, তাই তারা দেশের মানুষকে লেখাপড়া শিখতে দিতে চায় না। এটাই বোধ হয় তাদের উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা  শুক্রবার-শনিবার আবার হরতাল দিয়ে দিতে পারে। কারণ তাদের তো কোনো বিশ্বাস নেই। তারা তো ধর্মের নামে ব্যবসা করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার শুধু শুক্র ও শনিবারে এসএসসি পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। কারণ ছেলেমেয়েরা ঝুঁকির মধ্যে পরীক্ষার হলে যেতে পারে না। তাই নতুন করে পরীক্ষার সময়সূচি প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ। সেকুলারিজম মানে নাস্তিকতা নয়। সকল ধর্মের মানুষের ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করতে এটি হলো একটি রাষ্ট্রীয় নীতি। এই নীতি অনুযায়ী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর দেশের অন্যতম সাংবিধানিক মৌলিক নীতি হিসেবে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় নীতি হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, ইসলামের মূলনীতি হচ্ছে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সহ অবস্থান ও সম্প্রীতি। এটিই মহানবী রাসুল (সা.) এর শিক্ষা। আওয়ামী লীগ সব সময়ই এ নীতিকে তুলে ধরছে যাতে প্রত্যেকে তাদের ধর্মীয় অধিকার ভোগ করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া সকল রাজনৈতিক দলই তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করছে। স্বাধীনতার পর কেবলমাত্র বঙ্গবন্ধুই ইসলামের উন্নয়নে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সামরিক শাসকরা ইসলামের জন্য কিছুই করেনি। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধু জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বর্ধনে প্রকল্প গ্রহণ করেছিলেন। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরবের আর্থিক সহায়তায় জাতীয় মসজিদের দুটি মিনার নির্মাণ এবং আরো সম্প্রসারণের জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। তবে বিএনপি-জামায়াত যারা নিজেদের ইসলামপন্থি দাবি করে তারা ২০০১ সাল থেকে পুরো ৫ বছর প্রকল্পটি ফেলে রাখে।