নানা নামে হরেক পদের পদক বাণিজ্য

 

চুয়াডাঙ্গারই এক উপজেলার বাসিন্দা প্রায়ই পদক পান। পদক লাভের খবর স্বগর্বে পত্রস্থও হয়। নানা নামের প্রাপ্ত পদকের সংখ্যা ঠিক কতো, তা নিশ্চিত না হলেও অনুমান- একশো পার। কেন? কি কারণে অতো পদক? এসব প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়েই পাওয়া গেছে পদকবাণিজ্যের সঙ্ঘবদ্ধ বহু চক্রের বহুবিধ চরিত্রের তথ্য।

পদকবাণিজ্য! সে আবার কেমন? অনেকেরই চোখ চড়কগাছ হতে পারে। বিলম্বে হলেও পদকবাণিজ্য নিয়ে পত্রপত্রিকায় প্রতারণার খবর টুকটাক প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। বলা হয়েছে, ভুঁইফোড় সংগঠন সংস্থার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নামে পদক প্রদানের ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। এ ব্যবসার গোড়াতে বড় বড় শহরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের কর্তাদের প্রদানের মাধ্যমে অর্থ আয় করলেও কালক্রমে তা এতোটাই বিস্তার লাভ করেছে যে, পদক প্রদানের শিকার খুঁজতে ওরা জেলা ও উপজেলাসহ ইউনিয়ন পর্যায়েও নেমেছে। অনেক ইউপি চেয়ারম্যান এ ধরনের পদক নিয়ে স্বগর্বে এলাকায় ফিরে ডামাডোলও পেটান বটে। লাভ? উভয়েরই। পদক পাওয়া ব্যক্তির কিছু অর্থ গেলেও শোকেসে বাড়লো ক্রেস্ট, সামাজিকভাবে তেমন সাড়া না পড়লেও পোষা তোষামোদকারীর মুখে পদক পাওয়ার প্রচারণার উপকরণ তো জুটলো। পদক প্রদানকারীদের অর্থ আয়ই যখন লক্ষ্য তখন তারা কার কী নামের পদক দিচ্ছে তা তো তাদের বিচার্য বিষয় নয়। যদিও অভিযোগ রয়েছে, জুরি বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে পুরস্কার নিতে প্রলুব্ধ করে, পরে সেই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়। পদক পাওয়া ব্যক্তি টাকা দেয়ার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গোপন করেন। লজ্জায়। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি এমএজি ওসমানী থেকে শুরু করে পরিব্রাজক ইবনে বতুতার নামেও পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিদের নামেও রয়েছে পুরস্কার। এমএজি ওসমানী স্বর্ণপদক, ইবনে বতুতা স্বর্ণপদক, মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক, কাজী নজরুল ইসলাম স্বর্ণপদক, মহাকবি কায়কোবাদ স্বর্ণপদক, নবাব সিরাজউদ্দৌলা স্বর্ণপদক, বিজ্ঞানী স্যার জগদীশচন্দ্র বসু স্বর্ণপদক ইত্যাদি বাহারি নাম রয়েছে এসব পদক ও পুরস্কারের; যদিও এসব পদক ও পুরস্কার জাতীয় কোনো মর্যাদা নির্দেশ করে না। ঘরের শোভা বৃদ্ধি ছাড়া এসব পুরস্কারের কোনো সামাজিক মূল্যও নেই। যেসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে এসব পুরস্কার দেয়া হয় সেসব প্রতিষ্ঠানও কোনো স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান নয়। এরপরও এক শ্রেণির মানুষ সামাজিক স্বীকৃতি হিসেবে এসব পুরস্কার গ্রহণ করছে। পুরস্কার নিতে গিয়ে অনেকেই বুঝতে পেরেছে যে তারা প্রতারণার শিকার হয়েছেন। অনেকে এ পুরস্কার নিতে অস্বীকার করেছেন।

অসৎ কিছু মানুষ কেবল অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে পুরস্কার-ব্যবসা করে চলেছে। বছরের পর বছর এ অনৈতিক ব্যবসা চলছে। প্রতারিত হচ্ছে বিভ্রান্তও ছড়াচ্ছে। সরকার ও সামাজিক স্বীকৃত পদক-পুরস্কারও ওইসব বাণিজ্যিক পদকের হিড়িকে ম্লান হয়ে যাচ্ছে। প্রতারণার শামিল এ অনৈতিক পদক-পুরস্কার ব্যবসা বন্ধ করার বিশেষ উদ্যোগ দরকার।