স্টাফ রিপোর্টার: কক্সবাজার থেকে আইকন পরিবহনের বাসে করে ফেরার পথে গতকাল মঙ্গলবার ভোররাতে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন যশোরের জাসদ নেতা নুরুজ্জামান পপলু ও তার মেয়ে মাইশা তাসনিম। যশোর শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল সড়কে তাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেলো স্বজনেরা বিলাপ করছেন।
নুরুজ্জামানের খালাতো বোন আফরোজা পারভীন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, পেট্রোলবোমা জামায়াত না আওয়ামী লীগ মেরেছে, তা আমরা জানি না। আমরা কাউকে বিশ্বাস করি না। মানুষের জীবন নিয়ে ওরা নাটক করছে। মাইশার বান্ধবী সানজানা ইসলাম নেহা জানালো, গত শনিবার মাইশার সাথে আমার ফেসবুকে সর্বশেষ কথা হয়। ফেসবুকে চ্যাট করার সময় ওকে লিখেছিলাম, তুই চলে গেলি। তোকে অনেক মিস করছি। জবাবে ও লিখেছিলো, তিন/চার দিন পরই তো ফিরে আসছি। সেই ফেরা আর হলো না। বলেই নেহা কাঁদতে থাকে।
আফরোজা পারভীন বলেন, গত বৃহস্পতিবার নুরুজ্জামান তার ব্যবসার কাজে চট্টগ্রামে যাচ্ছিলেন। এ সময় মেয়ে মাইশা কক্সবাজারে বেড়ানোর বায়না ধরে। ওই বায়না তিনি আর ফেলতে পারেননি। স্ত্রী আর মেয়েকে নিয়ে তিনি চট্টগ্রামে যান। সেখানে কাজ মিটিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে বেড়াতে যান। গতকাল রাতে আইকন পরিবহনে করে ফেরার সময় চৌদ্দগ্রামে দুর্বৃত্তদের ছোড়া পেট্রোলবোমায় বাসে আগুন ধরে যায়। এ সময় ভাবী কোনো রকমে জানালার কাঁচ ভেঙে বেরিয়ে আসেন। এর মধ্যে ভাই আর ভাইঝি পুড়ে মারা যায়।
কক্সবাজারে বেড়াতে পেরে উচ্ছ্বসিত ছিলো মাইশা। ১ ফেব্রুয়ারি সকাল আটটার দিকে নিজের ফেসবুকে মা-বাবার সাথে সমুদ্রের তীরে তোলা ছবি পোস্ট করে সে। এ নিয়ে বন্ধুদের কমেন্টসের জবাবও দেয়। সেই ছবি এখন শুধুই স্মৃতি। ছবি থেকে চিরদিনের মতো হারিয়ে গেছে বাবা আর মেয়ে। স্বামী-সন্তানকে হারিয়ে মা পাগলপ্রায়। পেট্রোলবোমার আগুন মুহূর্তেই সব লণ্ডভণ্ড করে দিলো।
নুরুজ্জামান ছিলেন ঠিকাদার। এছাড়া তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) যশোর জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন বলে দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে। তার মেয়ে মাইশা যশোর পুলিশ লাইন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণিতে পড়তো।
নিহত মাইশার বান্ধবী নেহা জানালো, স্কুলের শিক্ষা সফর নিয়ে অনেক পরিকল্পনা ছিলো মাইশার। অবরোধের কারণে সেই সফর এখন স্থগিত। কত্ত পরিকল্পনা ছিলো ওর। কিছুই ওর দেখা হলো না, করা হলো না।
মাইশার স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবদুল আজিজ বলেন, মাইশা অত্যন্ত মেধাবী ছাত্রী ছিলো। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় সে জিপিএ-৫ পায়। প্রথম শ্রেণি থেকেই ও এ স্কুলে পড়ছিলো। নিহত মাইশার বড় ভাই মাথিন ঢাকায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি আর ওই দুর্ঘটনায় আহত মা মিলে লাশ নিয়ে ঢাকা থেকে যশোর যাবেন।