স্টাফ রিপোর্টার: দেশের পাঁচ লাখ দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নগদ অর্থ সহায়তা দেবে সরকার। একই সাথে শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী সন্তানের মা যারা আর্থিকভাবে অসচ্ছল, তাদেরও অর্থ সহায়তা দেয়া হবে। এ হিসাবে একজন দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারী চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ৮০০ টাকা পাবেন।
প্রধানমন্ত্রী একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল মঙ্গলবার একনেকের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভায় মোট ৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকার আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর মোট ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৬৩৬ কোটি, প্রকল্প সাহায্য ২ হাজার ৮৪৭ কোটি এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৭ কোটি টাকা। অনুমোদিত প্রকল্পের মধ্যে ৬টি নতুন ও ২টি পুরোনো।
দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারীদের সহায়তা প্রকল্পে দেশের রংপুর ও ঢাকা বিভাগের সাতটি জেলার ৪২টি উপজেলার ৪৪৩ টি ইউনিয়নের ১৬ লাখ পরিবার থেকে ৫ লাখ দুস্থ নারী বাছাই করা হবে। এ লক্ষ্যে একনেক সভায় মূলত দরিদ্র মায়েদের দারিদ্র্য নিরসনের পাশাপাশি তাঁদের সন্তানের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে নগদ অর্থ প্রদানে ইনকাম সাপোর্ট প্রোগ্রাম ফর দ্যা পুরেষ্ট (আইএসপিপি) প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়।
এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার ৩৮ কোটি টাকা ও বিশ্বব্যাংক অবশিষ্ট ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ঋণ দেবে। স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে ২০২০ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করবে।
একনেক পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, প্রকল্প এলাকা নির্ধারণে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দরিদ্রতা ম্যাপকে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে। গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, জামালপুর, শেরপুর ও ময়মনসিংহ-সাত জেলায় দারিদ্রের হার ৩৫ ভাগেরও বেশি। এসব জেলায় অপুষ্টির হারও তুলনামূলক অনেক বেশি। প্রকল্প এলাকা বাছাইয়ে এ বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তবে পর্যায়ক্রমে ৬৪টি জেলা এ প্রকল্পের আওতায় আসবে।
প্রকল্পের নগদ অর্থ বিতরণ সম্পর্কে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দরিদ্র অন্তঃসত্ত্বা নারীদের গর্ভকালীন মোট চারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে। প্রতিবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ২০০ টাকা করে দেয়া হবে। এদিকে শূন্য থেকে ২৪ মাস বয়সী দরিদ্র শিশুদের প্রতি মাসে একবার শরীরের বৃদ্ধির অবস্থা পরীক্ষা করে নগদ ৫০০ এবং ২৫ থেকে ৬০ মাস বয়সী শিশুদের তিন মাসে একবার শরীর বৃদ্ধির পরীক্ষা করে নগদ এক হাজার টাকা দেয়া হবে। এছাড়াও অন্তঃসত্ত্বা নারী ও মায়েরা প্রতি মাসে শিশুপুষ্টি ও উন্নত শিক্ষাসংক্রান্ত কর্মশালায় অংশগ্রহণ করলে প্রতিবার ৫০০ টাকা করে পাবেন বলে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান।
সভায় সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ ও গাজীপুরের আটটি উপজেলায় গ্যাস সঞ্চালন লাইন স্থাপনে ৯৭৯ কোটি টাকায় ধনুয়া-এলেঙ্গা এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম তীর-নলকা গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। এর মোট ব্যয়ের মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৪৬৫ কোটি, জাপানি উন্নয়ন সংস্থা জাইকা প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ৫০৭ কোটি ও অবশিষ্ট ৭ কোটি সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩০ ইঞ্চি ব্যাসের ৬৬ কিমি. দীর্ঘ পাইপলাইন নির্মিত হবে। এর ফলে বিদ্যমান ও নির্মাণাধীন বিদ্যুতকেন্দ্র, সার কারখানা ও অন্যান্য শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত হবে বলে একনেক সভায় জানানো হয়। গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল) জুলাই ২০১৪ থেকে জুন ২০১৯ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।