প্রকাশ্যে খুনের দু সপ্তা পার : গ্রেফতার হয়নি কেউ

চুয়াডাঙ্গা ছয়ঘরিয়ার সিরাজুল ইসলাম সিরাজ হত্যা মামলা : বাদীর নালিশ
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের ছয়ঘরিয়ার সিরাজুল ইসলাম সিরাজ খুনের দু সপ্তা পার। আসামিদের নাম উল্লেখ করে মামলা করলেও পুলিশ তাদের একজনকেও ধরতে পারেনি। আসামিরা উল্টো হুমকিধামকি দেয়ার পাশাপাশি অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী মাহবুব আলম।
চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য সিরাজুল ইসলাম সিরাজ গত ১৮ জানুয়ারি বিকেলে দিবালোকে খুন হন। বড়শলুয়া থেকে মোটরসাইকেলযোগে নিজ বাড়ি ফেরার পথে সড়কের চৌমাথা নামক স্থানে ওত পেতে থাকা একদল অস্ত্রধারী বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে গতিরোধ করে। মোটরসাইকেল থেকে টেনেহেঁচড়ে নামিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে খুন করা হয়। পরদিন সিরাজুলের ছোট ভাই মাহবুব বাদী হয়ে হত্যামামলা দায়ের করেন। তিনি এক প্রতিবাদ বিবৃতিতে বলেছেন, সিরাজুল ইসলাম সিরাজ সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতেন। সাধারণ মানুষ তাকে ভালোবাসতেন। ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়ে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনের পর তিনি সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীও হন। তাকে প্রকাশ্যে ছয়ঘরিয়ার ইউনুস আলীর ছেলে হাবিবুর রহমানের গঠিত গ্যাং প্রধান একই গ্রামের মমিন, সাইদুর, ববলু, ইলিয়াস, শাহী, সহিদ, মাসুদ, লাল্টু ও শাহপুরের টিটুসহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা প্রকাশ্যে খুন করেছে। এদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়েছে। পুলিশ গ্রেফতার করেনি। ওরা নানাভাবে অপপ্রচারও চালাচ্ছে।
মামলার বাদী প্রতিবাদ বিবৃতিতে বলেছ্নে, মামলার দায় থেকে বাঁচার জন্য উপরোক্ত আসামিরা মামলার তদন্ত ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য কাল্পনিক মিথ্যা বানোয়াট, ভিত্তিহীন তথ্য দিয়ে অপপ্রচারে মেতেছে। তারই ভিত্তিতে গত ২৫ জানুয়ারি একটি পত্রিকায় বানোয়াট তথ্য প্রকাশ করে বলে, স্বাধীনতার পর আমার ভাই সিরাজ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। অথচ তার জন্ম তারিখ ৪ মার্চ ১৯৭৫। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমাদের চাচাতো ভগ্নিপতি খেজুরার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলী জাফরের নেতৃত্বে প্রায় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা আমাদের বাড়িতে এসে মাঝে মাঝে খাওয়া-দাওয়া করেছেন। অথচ রহুল কুদ্দুস পচা, মিলন, লিটন, টুটুল, মাহবুল, জাহিরুল ও লিপ্টনকে জড়িয়ে হাস্যকর তথ্য প্রকাশ করে হাস্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়েছে। কারণ এদের সকলেরই জন্ম ৮০ ও ৯০ দশকের পর। আমার ভাই মৃত সিরাজুল ইসলামের সাথে ওবাইদুলের মেম্বার পদে এবং আমার ভাই সিরাজুল ইসলামের চেয়ারম্যান পদে ভোটে দাঁড়ানা নিয়ে কোনো শত্রুতার প্রশ্নই আসে না।
সিরাজুল ইসলাম সিরাজ খুন মামলার বাদী তার প্রতিবাদ বিবৃতিতে বলেছেন, হাবিবুর রহমান সম্পর্কে এলাকার মানুষ জানে। তার অপকর্মের খতিয়ান অনেক লম্বা। চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরের শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের ছয়াঘরিয়া গ্রামের ইউনুস আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিবার দীর্ঘদিন ধরেই সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে নিজেই ত্রাস হিসেবে চিহ্নিত। গ্রামে দীর্ঘদিন ধরেই জনশ্রুতি রয়েছে, ১৯৯৫ সালের ২৮ নভেম্বরর তাদের দুটি বন্দুক তার ভগ্নিপতি তিতুদের মহিকে দেয়ার পর একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটে। ছয়ঘরিয়ার কিবরিয়াকে খুন করার জন্যও গ্যাং বাক্কাকে অর্থ দেয়। বাক্কা খুন না করলে তাকেই শেষ পর্যন্ত খুন হতে হয়। এ খুনের আড়ালেও হাবিবারের ষড়যন্ত্রের বিষয়টি গ্রামের অনেকের কাছে অজনা থাকেনি। বাক্কা খুনের প্রতিশোধে নিতে গিয়েই বাক্কার ভাই আকমাল শেষ পর্যন্ত হাবিবুরের ভাই লুটুকে খুন করে বলে। এসব যেমন গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে অজানা নয়, তেমনই হাবিবারকে নিয়ে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্টে বিস্তারিত উঠে আসে। হাবিবারের বিরুদ্ধে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় ইতঃপূর্বে হত্যা মামলার নম্বর হলো- ০৫, তাং- ০৫/০৬/২০০৯। সর্বশেষ হত্যা মামলাটি রুজু হয়েছে গত ১৯ জানুয়ারি। পুলিশ তাকে গ্রেফতর করে রিমান্ডে নিলে এসব অভিযোগের সত্যতা মেলবে।
সিরাজ হত্যা মামলার বাদী আসামিদের গ্রেফতারের অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুরছে। পুলিশ আন্তরিক হলেই ধরা পড়বে বলে আমার বিশ্বাস।