দেশব্যাপি ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ আর হরতালের থাবায় বিপর্যস্ত কৃষি
বখতিয়ার হোসেন বকুল: দেশব্যাপি ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ আর হরতালের থাবায় চাষিরা তাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। বাইরের ব্যাপারিরা আসতে না পারায় স্থানীয় বাজারে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে তাদের ক্ষেতের ফসল। গত রোববার দামুড়হুদার সাপ্তাহিক হাট ঘুরে এ চিত্রই দেখা গেছে।
দামুড়হুদা হাটে টমেটো বিক্রি করতে আসা চাষি দামুড়হুদার খাঁ পাড়ার মজনু মিয়া, একই গ্রামের খোকন, শিপলু ও আজিজুল জানান, আমরা অনেক আশা নিয়ে এবার টমেটার আবাদ করেছিলাম। প্রথম দিকে মাত্র ২/১ চালান ভালো দামে বিক্রি করতে পেরেছি। তারপর থেকে দেশব্যাপি ২০ দলীয় জোটের টানা অবরোধ আর হরতালের কারণে বাইরের ব্যাপারিরা আসতে না পারায় আমরা টমেটো বিক্রি করতে পারছি না। স্থানীয় বাজারে আর কতো মাল টানতে পারে। কিন্তু করার তো কিছু নেই। টমেটো পেকে গেছে। ঘাম ঝরানো কষ্টের সবজি ক্ষেতেই নষ্ট হবে? তাই যা দাম পাচ্ছি তাই বিক্রি করতে হচ্ছে। দু থেকে আড়াইশ টাকা ঝুড়ি বিক্রি করলাম। যা কেজি প্রতি ৩ থেকে সাড়ে ৩ টাকা হয়। তারা আরো বলেন, দেশে সারা বছরে যে ফসল হয়, তার প্রায় ৮০ শতাংশ উৎপাদিত হয় ডিসেম্বর থেকে মার্চ এ চার মাসে। আমন ধান বেচাকেনার সময়ও এখন। মাঠে বোরোর চারা প্রস্তুত। গম ও আলুর ভরা মরসুমও এখন। এছাড়া হরেক রকম সবজিতো রয়েছেই। বোরোর জন্য সেচ ও সারের এখনই উৎকৃষ্ট সময়। কিন্তু অবরোধের কারণে কৃষকের কাছে তেল, বীজ ও সার পৌঁছুতে সমস্যা হচ্ছে। টানা চার বছর আমন ধানে লোকসান। লাগাতার অবরোধ-হরতালে চাহিদা ও সময়মতো সার-ডিজেল পাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। এ সময়ে যদি চাষে বাধা হয়, তাহলে তার নেতিবাচক ফল সারা বছর ভোগ করতে হবে। সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও খাদ্য নিরাপত্তায় সঙ্কট তৈরি হবে।
হাটে বাধা কপি বিক্রি করতে আসা দামুড়হুদা বেগোপাড়ার আকরাম মিয়া বলেন, ভাই কপির খদ্দের নেই। দু টাকা পিস তাও কেউ নিচ্ছেন না। এ বিষয়ে হাটের ইজারাদার বদর উদ্দিন বুদো মিয়া বলেন, খাদ্যশস্য ও কৃষি উপকরণ সরবরাহের বিষয়টি অবরোধের আওতার বাইরে রাখা উচিত। সবজি বিক্রি করে চাষিদের উৎপাদন খরচই উঠছে না। চাষিদের এ অবস্থা দেখে লজ্জায় খাজনা চাইতে পারছি না। মাঠে মাঠে শীতের সবজি গড়াচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে। মুলো ও কপি গরু-ছাগল দিয়ে খাওয়াচ্ছে। বাইরের ব্যাপারিরা আসতে না পারায় বেচা-কেনা নেই বললেই চলে। ফলে চাষিদের পাশাপাশি হাটে কাজ করা লেবার থেকে শুরু করে হাট ইজারাদারদেরও একই অবস্থা। সবজিসহ কৃষি পণ্যবাহী যানবাহন অবরোধের আওতামুক্ত রাখতে ও প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারায় যানবাহন চালানোর উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে এলাকার ভুক্তভোগীরা।