২০ হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল : ১১টির বিরুদ্ধে মামলা

স্টাফ রিপোর্টার: হাজীদের সাথে প্রতারণা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মের দায়ে ২০ হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে। এদের পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানাও দিতে হবে। এরমধ্যে ১১টির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করবে সরকার। পাশাপাশি পাঁচ এজেন্সির লাইসেন্স এক বছরের জন্য স্থগিত ও তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হচ্ছে। এ ২৫টি ছাড়াও আরও ৪৯ এজেন্সিকে জরিমানা করা হচ্ছে বিভিন্ন অঙ্কে। এর মধ্যে ১২টিকে তিন লাখ, ১৬টিকে দু লাখ এবং ২১ হজ এজেন্সিকে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হবে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় এসব শাস্তি চূড়ান্ত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বরাবরের মতো এবারও হাজীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠে শতাধিক হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৮৭টির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া যায়। টাকা নিয়েও হজে না নিয়ে যাওয়া, হজের নামে মানুষ পাচার, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হাজীদের বাড়িতে না রাখা, যাতায়াতের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা না করা, একই কক্ষে গাদাগাদি করে অবস্থান, পর্যাপ্ত গাইড না রাখা এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ তদন্ত করতে ধর্ম সচিব চৌধুরী মো. বাবুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির মালিক ও প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শুনানি গ্রহণ করে। এর ভিত্তিতে শাস্তি চূড়ান্ত করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। প্রমাণিত না হওয়ায় ৯ এজেন্সিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করে তদন্ত কমিটি। অবশ্য এসব শাস্তির বিরুদ্ধে ৫০ এজেন্সি ইতিমধ্যে আপিল করেছে।

তদন্ত কমিটির সদস্য ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (হজ) ফয়জুর রহমান ফারুকী জানান, সরকারের দেয়া এসব শাস্তির বিরুদ্ধে আপিল করার সময়সীমা ২৯ জানুয়ারি শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ৫০ এজেন্সি আপিল করে। আজ (সোমবার) আপিল শুনানি শেষ হবে। এতে শাস্তি ও জরিমানা সামান্য হেরফের হতে পারে।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, লাইসেন্স বাতিল হওয়া এজেন্সিগুলোকে কোনো ছাড় দেবে না সরকার। বাতিল করা ২০ এজেন্সির প্রতারণার শিকার হন ৬৩১ হজযাত্রী। তার মধ্য থেকে সরকারি খরচে ৩৯৮ জনকে হজে পাঠানো হয়েছিল। বাকিদের পাসপোর্ট ও ভিসা নিয়ে এজেন্সি কর্মকর্তারা পালিয়ে গেলে তাদের পাঠানো সম্ভব হয়নি।

লাইসেন্স বাতিল হচ্ছে যাদের: অপরাধের ধরন বিবেচনায় ২০ হজ এজেন্সির লাইসেন্স বাতিল ও ১১ এজেন্সির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব এজেন্সিকে শাস্তির ধরন অনুযায়ী পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে। এজেন্সিগুলো হল- ওহী ট্রাভেলস এজেন্ট (মামলা), ফোর স্টার ইন্টারন্যাশনাল, মহসিন ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, কাবার পথে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (৮৭০), মানজিল আল হারামাইন টুরিজম সেন্টার, হাজী হাফেজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (মামলা), মুসলিম ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, খাদেমুল হারামাইন সার্ভিস (মামলা), হুমায়রা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস (মামলা), সাদেক ট্রাভেলস (মামলা), আল-আসফাক ইন্টারন্যাশনাল (মামলা), ফ্লাইট রোজ ট্রাভেলস (মামলা), ইউনিভার্সাল ট্রাভেলস (মামলা), ব্লু-স্কাই এয়ারওয়েজ, আল মাগফিরাহ ট্রাভেলস (মামলা), নাজাত হজ ট্রাভেলস (মামলা), আল ইমাম হজ কাফেলা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, বুশরা ইন্টারন্যাশনাল, আল-নাঈম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল (মামলা) এবং আলতাফ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস।

লাইসেন্স স্থগিত ও তিন লাখ টাকা জরিমানা: এক বছরের জন্য লাইসেন্স স্থগিত ও ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ৫ হজ এজেন্সিকে। এগুলো হল- আশা এভিয়েশন, আদিব এয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, হারামাইন ট্রাভেলস, দোলা ফকির এয়ার ট্রাভেলস এবং সালওয়া ওভারসিস সার্ভিস। এছাড়া শুধু তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে ১২ এজেন্সিকে। এগুলো হচ্ছে- আল-বারাকা ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, খান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, খাজা এয়ার ট্রাভেলস, কাজী ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, শিপলু ওভারসিজ, ট্রাভেলন এয়ার সার্ভিস, ইন্টার গালফ ট্রাভেলস লিমিটেড, দিশারী এয়ার সার্ভিস, হাজী আল মুজিব কর্পোরেশন, সাজিদ হজ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, খান ট্রাভেলস সার্ভিস এবং এমজি এয়ার ইন্টারন্যাশনাল।

দু লাখ টাকা জরিমানা: নানা অপরাধে ১৬ হজ এজেন্সিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে- কসমিক এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, এআর ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, আবাবিল এয়ার সার্ভিস, বেলালী হজ সার্ভিস অ্যান্ড এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, জেদ্দাহ এয়ার ট্রাভেলস, ঝিকরা হজ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, এমএমআর ওভারসিস, মুরশিদ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সাউথ এশিয়ান এয়ার বাংলাদেশ, সাউথ এশিয়ান ওভারসিস নেটওয়ার্ক, উত্তরণ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, ওয়েল ফেয়ার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সরকার ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এম আলী ইন্টারন্যাশনাল এবং শফিক ওভারসিস।

এক লাখ টাকা জরিমানা: এক লাখ টাকা জরিমানা গুণতে হবে ২১ এজেন্সিকে। এরা হলো- তাজমহল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আকবর ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, শোয়াইব এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, শুহাইল এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সোমা ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিস, রঙ্গন এয়ার সার্ভিস, আবতাহ এয়ার ট্রাভেলস, এয়ারওয়াব ইন্টারন্যাশনাল, দীন ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, গোল্ডেন হলিডেজ ইন্টারন্যাশনাল, এমএএম ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, এসএম ট্রাভেলস ইন্টারন্যাশনাল, সেলিনা নুর ট্রাভেলস, শোহাদা এভিয়েশন্স, সাউথইস্ট ট্রাভেলস, সাউথ-ইস্ট ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আফনান ট্রাভেলস, মাওনা ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, তাউসিফ ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, মক্কা ওভারসিস এবং নিশাত ট্রাভেলস লিমিটেড। এছাড়া গ্লোব ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, নেপচুন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, জনসেবা ইসলামিক ওভারসিস ও অলটাইম এয়ার ইন্টারন্যাশনালের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।

অব্যাহতি পেলেন যারা: প্রমাণিত না হওয়ায় ৯ হজ এজেন্সিকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেছে তদন্ত কমিটি। এজেন্সিগুলো হলো- আরশিনগর ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, আদিল ওভারসিস, কিবলা ইন্টারন্যাশনাল, সাবওয়ে ট্রাভেলস অ্যান্ড হলিডে, তাকওয়া অতিথি ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, সোলাইমান ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, জান্নাতুল খুলদ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, তেহজীব ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস এবং কাবার পথে ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস (৮৭১)।