পাচারকারীদের তৎপরতা রোধ করতে হবে

মাছ ধরার ট্রলারে সাগর পাড়ি দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার সময় আবারও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার সকালে মহেশখালীর কাছে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে কমপক্ষে ৮০ জন যাত্রী নিয়ে এফবি ইদ্রিস নামে একটি ট্রলার ডুবে যায়। সন্ধ্যা নাগাদ কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় ডুবে যাওয়া ট্রলারসহ ৪২ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়। এ পর্যন্ত ৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রলারডুবির ঘটনায় নিখোঁজের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ ঘটনায় ১৫-২০ জন যাত্রী নিখোঁজ আছেন। তবে কোস্টগার্ডের দাবি, নিখোঁজের সংখ্যা অন্তত ৫০। সাগরপথে অবৈধ পন্থায় মালয়েশিয়ায় মানব পাচারকালে এভাবে প্রায়ই ট্রলারডুবির ঘটনা ঘটছে। প্রাণ হারাচ্ছে ভাগ্যান্বেষী নিরীহ মানুষ।

জানা যায়, আগে কক্সবাজারের টেকনাফ উপকূল থেকে মানব পাচারের ঘটনা ঘটলেও এর বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার হওয়ার পর পাচারকারীরা রুট পরিবর্তন করেছে। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মাঝির ঘাট থেকে ট্রলারটি যাত্রা শুরু করেছিলো। দেখা যাচ্ছে, মানবপাচারকারী ও দালালদের দৌরাত্ম্য এখনও বহাল তবিয়তেই চলছে। তারা বিপুল অর্থ উপার্জনের প্রলোভন দেখিয়ে নিরীহ মানুষদের মালয়েশিয়া পাঠানোর জন্য মাছ ধরার ট্রলারে তুলে দিচ্ছে। বিনিময়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। এ পরিস্থিতিতে পাচারকারীদের তৎপরতা রোধে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজনীয়তা জোরালো হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবারের ট্রলারডুবির ঘটনায় ১১ দালালের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করেছে পুলিশ। কিন্তু এতেই যে সাগরপথে মানবপাচার বন্ধ হবে না, এটি সহজেই বোঝা যায়। পাচারকারীদের পৃষ্ঠপোষকদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে হবে তাদের বিরুদ্ধেও। ধারণা করা হয়, সাগরপথে মানবপাচারের সাথে বড় একটি স্বার্থান্বেষী চক্র জড়িত। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সাথে মিয়ানমার থেকে আগত কিছু রোহিঙ্গাও এর সাথে যুক্ত বলে খবর রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের সদিচ্ছা জরুরি।

সাগরপথে অবৈধ পন্থায় মালয়েশিয়া যেতে গিয়ে নিরীহ মানুষের প্রাণহানি মেনে নেয়া যায় না। এটি রোধ করতে হবে যে কোনো উপায়ে। সেই সাথে সাধারণ মানুষ যাতে কারও প্রলোভনের বশবর্তী হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাত্রা না করে, সেজন্য এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগও নেয়া দরকার।