অবরোধে অর্থনীতির শ্বাসরোধ

 

লাগাতার অবরোধ ও অবরোধের নামে যানবাহনে অগ্নিসংযোগ, পুড়িয়ে মানুষ মারাসহ সহিংস কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি। ফাঁকে ফাঁকে চলছে হরতালও। ২৪ দিন ধরে চলা এ সহিংস রাজনীতি কবে শেষ হবে তা-ও কেউ জানে না। অথচ এরই মধ্যে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে রীতিমতো ধস নামার উপক্রম হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সমুদ্র ও স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি করা পণ্যের বিশাল স্তূপ জমেছে। অথচ কাঁচামালের অভাবে অনেক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেক কারখানায় উৎপাদিত পণ্যের বিশাল স্তূপ জমে গেছে, সেগুলো বন্দরে বা দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো যাচ্ছে না। তাই সেখানেও উৎপাদন বন্ধ রাখতে হচ্ছে। পুড়িয়ে দেয়ার ভয় থাকায় যানবাহন মালিকরা রাস্তায় যানবাহন নামাতে ভয় পাচ্ছেন। যারা সাহস করে নামাচ্ছেন, তারাও অনেক বেশি ভাড়া দাবি করছেন। ২৫ হাজার টাকার ট্রাকভাড়া ৫০-৬০ হাজার টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদনকারীদের লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাই শিল্পোদ্যোক্তা থেকে শুরু করে খুচরা ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবাই প্রমাদ গুনছেন। প্রমাদ গুনছেন পরিবহন ব্যবসায়ীরাও। ব্যাংকের ঋণ নিয়ে কেনা যানবাহন রাস্তায় নামাতে না পারলে কিংবা আয় না করতে পারলে তাদের পক্ষে ঋণ পরিশোধ করাও সম্ভব হবে না। রপ্তানিমুখী শিল্পগুলো চুক্তিতে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী পণ্য পাঠাতে না পারলে তাদের আরো বড় ক্ষতির মুখোমুখি হতে হয়। বিদেশি ক্রেতারা আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং বাংলাদেশ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। অবরোধের কারণে কৃষি খাতও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছে। পাশাপাশি বাজারেও অনেক পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। জনজীবনে নানা কারণেই নেমে এসেছে চরম দুর্ভোগ। অথচ সমস্যার সমাধান বা পরিস্থিতি উন্নয়নে বাস্তবসম্মত কোনো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

রাজনীতির লক্ষ্য যদি জনকল্যাণ হয়, দেশ ও দেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়, তাহলে এ সর্বনাশা অবরোধ-হরতাল কোনোভাবেই কাম্য নয়। গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকবেই। সেই বিরোধ নিরসনের উপায়ও হবে গণতান্ত্রিক। সহিংসতা কোনোভাবেই নয়। আমাদের মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্রে পোড়ামাটি নীতি অনুসরণের কোনো সুযোগ নেই। হিংসা হিংসারই জন্ম দেয়- এ সত্যটি উপলব্ধি করে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে হিংসাত্মক রাজনীতির পথ থেকে সরে আসতে হবে। তা না হলে হিংসার আগুনে সবাইকেই পুড়ে মরতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের রাজনীতিবিদরা যথেষ্ট বিচক্ষণ। দেশের কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য তথা সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর হরতাল-অবরোধ যে ভয়ঙ্কর আঘাত করছে, তা তারাও নিশ্চয়ই উপলব্ধি করছেন। কাজেই আমরা চাই, অবিলম্বে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করা হোক, দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনকে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হোক। সহিংসতার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক পন্থায় দাবি আদায়ের চেষ্টা করা হোক।