নাশকতা ঠেকাতে যেকোনো ব্যবস্থা নিন

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের চলমান নাশকতা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ এবং জনগণের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনে যেকোনো ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশাপাশি তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা,  মানবাধিকার সংরক্ষণ ও সংবিধান-গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব পালনে এ বাহিনীকে  ইস্পাত কঠিন মনোবল নিয়ে কাজ করার আহবান জানান।

গতকাল বুধবার পুলিশ সপ্তা-২০১৫ উপলক্ষে তেজগাঁও নিজ কার্যালয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশ দেন। সকাল পৌনে দশটায় শুরু হয়ে এ বৈঠক শেষ হয় বেলা পৌনে বারোটায়। সভার শুরুতে পুলিশের পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- পুলিশ বাহিনীর জন্য আলাদা ডিভিশন, প্রস্তাবিত ৫০ হাজার নতুন জনবল দ্রুত নিয়োগ, ২০টি গ্রেড-১ পদ, যানবাহন, থানা ও ব্যারাকে অবস্থানকারী পুলিশ সদস্যদের জন্য ফ্রেস মানি, একটি বিশেষায়িত হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজ, ঢাকায় চারটি পুলিশ লাইন্স এবং সিআইডি, ডিএমপি ও ৱ্যাব প্রধানের পদটি গ্রেড-১ এ উন্নীত।

বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী পুলিশের এ দাবিগুলো গভীর মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছেন। বৈঠকের শুরুতে পুলিশের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বক্তব্য রাখেন পুলিশ মহাপরির্দশক একেএম শহীদুল হক, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি শফিকুল ইসলাম, ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া। এরপর বক্তব্য রাখেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক খান ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সর্বশেষ পুলিশের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (প্রশাসন) মোখলেসুর রহমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি জোটের অবরোধের মধ্যে চলমান নাশকতা যে কোনো উপায়ে দমন করতে পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘মানুষের জানমালের নিরাপত্তা আপনাদের দিতেই হবে। আর সেটা দেয়ার জন্য যত কঠিন কাজ হোক সেটা আপনারা নির্দ্বিধায়  করে যাবেন, অন্তত এইটুকু লিবার্টি আমি আপনাদের দিচ্ছি। সরকার প্রধান হিসেবে আমি আপনাদের অনুমতি দিচ্ছি যে পেট্রোল বোমা ছুঁড়ে মানুষ হত্যাকারী ঘাতকদের বিরুদ্ধে যখন যেখানে যে ব্যবস্থা  নেয়া প্রয়োজন তা আপনারা নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তার সন্তান হারানোর ব্যথা বুঝতে পারছেন। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্য যে, তিনি এখনো তার দলের লোকদের পেট্রোল বোমা হামলায় প্রতিদিন স্বজন হারানো মানুষের বেদনা ও আর্তনাদ বুঝতে পারছেন না। বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধে পেট্রোল বোমা হামলায় মানুষ হত্যার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সম্পূর্ণভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড। দেশের মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তারা আশা করে, কঠোর হস্তে এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধ করা হবে।  পুলিশ সদস্যদের প্রতি আস্থার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করি, আপনারা যখন নিজ নিজ এলাকায় ফিরে যাবেন তখন এ ব্যাপারে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি দেশ সৃষ্টি করেনি। এজন্য দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের কোনো দরদ নেই।  আমরা এদেশ সৃষ্টি করেছি। দেশের জন্য আমাদের দরদ আছে এবং লাখ লাখ শহীদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ গড়ার দায়িত্ব আমাদের। তিনি বলেন, উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে মৌলিক ব্যবধান রয়েছে। আমরা দেশকে খাদ্যে স্বনির্ভর করতে চাই, কিন্তু এক্ষেত্রে বিএনপি দেশকে পরনির্ভরশীল করতে চায়। আমরা চাই দারিদ্র্য নির্মূল করতে- অথচ বিএনপি চায় দেশের মানুষকে ভিক্ষুকে পরিণত করতে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসী ও জঙ্গি তত্পরতা দমনে দৃঢ় মানসিকতার সঙ্গে কাজ করতে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আজ আপনাদের কাছে আমার একমাত্র প্রত্যাশা হচ্ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি যাতে আমরা দেশের অর্থনীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে পারি।

গত বছর ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে নাশকতা দমনে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে  সন্ত্রাস ও নাশকতা মোকাবেলায় পুলিশের সাথে জনগণকেও সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন প্রধানমন্ত্রী।